২৮ অক্টোবর ২০২৫

৫৪৪ দিন পর শিক্ষার্থী-শিক্ষকে মুখর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কক্সবাজার প্রতিনিধি»

করোনার প্রাদূর্ভাব থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে গত দেড়টি বছর বন্ধ ছিল সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধের প্রায় ৫৪৪ দিন পর রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) খুললো সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই ভোর থেকেই প্রতিষ্ঠানমূখী শিক্ষার্থীদের সারি পড়ে যায়। অনেকদিন পর আগত শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে শিক্ষকগণও স্কুল ফটকে দাঁড়িয়েছেন। কক্সবাজারের ৫শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, দু’ডজনাধিক কলেজ ও তিন ডজন মাদ্রাসায় প্রায় একই চিত্র দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় আগাম নির্দেশনায় আগে থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে সাজানো হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষ। কক্সবাজারের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল যেন উৎসবের আমেজ।

সকালে দেখা গেছে, ৭টা থেকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। প্রবেশ পথে প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি তদারকি করে,  তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার পর স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করান।

কক্সবাজার কে জি এন্ড মডেল হাই স্কুলেও শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়। দেয়া হয় মাস্কও।

একই ভাবে শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি, বিবেকানন্দ বিদ্যা নিকেতন, আদর্শ মহিলা কামিল মাদ্রাসা, ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা, ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জানাহারা ইসলাম বালিকা বিদ্যালয়, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতামূলক কথা বলা হয়।

বিবেকানন্দ বিদ্যা নিকেতনের সিনিয়র শিক্ষক মো. ওমর ফারুক বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুসারে দু’শ্রেণীকে দু’শিফটে চালু করা হয়েছে। প্রতি কক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীকে জেড আকৃতিতে বেঞ্চে একজন করে বসানো হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুবই উচ্ছাস প্রকাশ করছেন। শ্রেণী পাঠদানের পাশাপাশি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও তাদের ধারণা দেয়া হচ্ছে।

মেয়ের সাথে কক্সবাজার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আসা অভিভাবক ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, করোনার যে প্রাদূর্ভাব বিশ্ব স্তব্দ করে দিয়েছিল, ভেবেছিলাম আর বোধহয় সন্তানদের পড়া-লেখা হবে না। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পর হলেও মেয়েকে আবার স্কুল আঙ্গিনায় উপস্থিত করাতে পেরে আমি আনন্দিত। উচ্ছ্বসিত আমার মেয়েও। শিক্ষকদেরও দেখলাম উদ্বেলিত।

কক্সবাজার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সাড়ে ৭টায় স্কুল কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম শিফটে ২০২১ সালের এসএসসি ব্যাচের প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় শিফটে ২০২২ এর ব্যাচ ক্লাস চলছে। দীর্ঘদিন বন্ধের পর প্রথম দিনের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে আজ থেকে।

স্কুল খুলবে, তাই আগেভাগেই শ্রেণি, অফিস কক্ষ থেকে শুরু সব কিছু ধুঁয়ে-মুছে পরিস্কার করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করে সাজসাজ রব। বিশেষ করে দুই শিফটের স্কুলগুলোতে সকাল ৮টার আগেই শিক্ষার্থীরা নতুন স্কুল ড্রেস পরে অভিভাবকের হাত ধরে উপস্থিত হয়েছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুইটি শ্রেণির পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী একটি রুটিনও প্রণয়ন করা হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী, আজ রবিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত চলছে। 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদারকি রাখতে আগে থেকেই সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া আছে। শহরের স্কুলগুলোতে আমরা নিজেরাই নজর রাখছি। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতামূলক বয়ান দিতে সবাইকে আগে থেকেই বলা আছে। সেভাবেই সকল কার্যক্রম চলছে।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন