২৮ অক্টোবর ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সুবলং ঝরনার ব্যবস্থাপনা নিয়ে পর্যটকদের ক্ষোভ

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি প্রতিনিধি »

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ​আধার বিখ্যাত সুবলং ঝরনা ঘিরে পর্যটকদের আনাঘোনা যেমন বেড়েছে তেমনি ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঝরনাটি উপভোগ করার জন্য প্রবেশ মূল্য নেওয়া হলেও ঝরনার ব্যবস্থাপনায় নেই নূন্যতম কোনো উদ্যোগ। নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও সেবার ব্যবস্থাপনা।

রাঙামাটি সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার অদূরে জলপথে পাহাড়ের বুক চিরে আঁকা-বাঁকা চলার পথে বরকল উপজেলাধীন এই সুবলং ঝরনায় পর্যটকদের জন্য টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের অসাবধানতায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের উপস্থিতিতে সুবলং ঝরনাস্থলে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সুবলং ঝরনার নির্মল জলধারা পর্যটকদের হৃদয়ে এক ভিন্ন অনুভূতির কাঁপন তোলে। ভরা বর্ষামৌসুমে মূল ঝরনার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে এবং অপূর্ব সুরের মূর্ছনায় পর্যটকদের সযতনে মুগ্ধ করে।

এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে। ছবি : প্রতিবেদক।

নির্মল জলাধারের হিমশীতল পরিবেশে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে এসে যেকোনো মুহূর্তেই বিশাদময় পরিবেশের মুখোমুখি হতে পারেন পর্যটকরা। প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক টিকিট কেটে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখলেও সুবলং ঝরনাকে নিরাপদ রাখা তথা প্রবেশমুখ পরিস্কার রাখা, মহিলাদের জন্য সুব্যবস্থা না থাকাসহ পর্যটকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট্ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝরনায় আগত পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাঙামাটির স্থানীয় বাসিন্দা আবু তৈয়ব জানালেন, এই ঝরনায় দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন আনন্দ উপভোগ করার জন্য। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একটু দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন। কারণ আগত পর্যটক বা দর্শানার্থীরা অনেক সময় বেখেয়ালের বশে ঝরনা ওপরে উঠতে পাহাড় বেয়ে উঠার চেষ্টা করছে। এতে করে যেকোনো সময় পা পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। আমরা চাই সকলেই এখানে আসুক আনন্দ করুক তবে সেই আনন্দের একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।

ফটিকছড়ি থেকে সুবলংয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক হৃদয় বলেন, এটি খুবই আকর্ষণীয় একটি ঝরনা। এটি দেখতে মূলত রাঙামাটিতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে আমরা দেখলাম জনপ্রতি ২০ টাকা মূল্যে টিকিট ক্রয় করে প্রবেশ করলেও কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের নিরাপত্তায় দেখভাল করছে না।

পরিবার পরিজন নিয়ে ঝরনার পানিতে গোসল করতে আসা স্কুল শিক্ষক মঈন উদ্দিন জানালেন, সুবলং ঝরনাটি রাঙামাটির অন্যতম একটি পর্যটন স্পট হলেও এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিতান্তই কম। তিনি জানান, ইয়াং জেনারেশন অত্যন্ত আবেগ প্রবণ বিধায় তারা সবসময় এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। তাই উপরে উঠতে আগ্রহী হয়ে উঠে। এখানে যদি বাধা দেওয়ার মতো কেউ থাকতো তাহলে দুর্ঘটনা রোধ করা যেত।

অপর এক পর্যটক জানালেন, পর্যটন এলাকা হিসেবে সুবলং ঝরনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকার কথা থাকলেও এখানে তাদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রশাসনের কাউকেও আমরা দেখিনি। তথাপি পর্যটন কর্পোরেশনের কোনো একজনকেও এখানে দেখিনি। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।

সুবলং ঝরনায় আগত পর্যটকদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদানে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট্যদের দায়িত্বশীল উপস্থিতি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন আগত দর্শনার্থীরা।

বাংলাধারা/এআই

আরও পড়ুন