মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
‘চলন্ত ট্রেনে পাথর মারা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ’। ‘একটি পাথর কেড়ে নিতে পারে একটি প্রাণ’। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি পৌছানো যাচ্ছে না দুর্বৃত্তদের কানে। এটি প্রচারেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঘটছে অঘটন, ঘটছে আহত নিহতের ঘটনা, হারাতে হচ্ছে পরিবারের গৃহকর্তা বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ ধরনের কর্মকান্ড বেড়েছে। ২০১৮ সালে একবার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ট্রেনে পাথর ছোঁড়া বন্ধে’শিরোনামে তিনদিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন করে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে। সচেতনতার এই আয়োজন করেছে দি ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব। এর পর আর ক্যাম্পেইন দেখা যায়নি। তবে সর্বশেষ গত শনিবার চট্টগ্রামস্থ রেলওয়ে জেলা পুলিশ সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পেইন করেছেন।
সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর ব্রাহ্মনবাড়ীয়ায় আন্তঃনগর তিতাস এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচের জানালায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় এক যাত্রী আহত হয়েছেন। একই রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে টঙ্গী এলাকায়। একের পর এক পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও আইনী কোন পদক্ষেপ চোছে পড়ছে না দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।

এদিকে এ দুটি ঘটনার পর চট্টগ্রামস্থ রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গত শনিবার জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এমন অপরাধ বন্ধের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। তবে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় কেউ মারা গেলে সেক্ষেত্রে অপরাধীর সাজা মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত গড়াতে পারে।
এ ক্যাম্পেইনে দেশবাসী তথা রেল লাইনের আশপাশে থাকা বাড়ী-ঘর ও শিশু কিশোরদের সচেতন করে তোলার আহ্বান জানানো হয় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে। চলন্ত ট্রেনে পাথর বা ঢিল ছোঁড়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড’। ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ থেকে বিরত থাকুন, ভ্রমণরত যাত্রী ও রেলওয়ে ম্যানদের নিরাপদ রাখুন’।
দেখুন» চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ যেন থামছেই না
‘ট্রেনে পাথর মারে যারা, দেশ ও জাতির শত্রু তারা’। কিন্তু অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। কারণ রেল লাইনের ধারে থাকা এলাকাগুলো থেকে এ ধরনের কর্মকান্ডই ঘটছে। তবে তখন এ ক্যাম্পেইনটা ঈদে বাড়ী ফেরা মানুষকে সচেতন করতে ‘ট্রেনে সতর্ক থাকুন, নিরাপদে বাড়ী ফিরুন’ এমন শ্লোগান নিয়ে লিফলেট বিতরন করছে ভলেন্টিয়ার হিসেবে থাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কয়েকদিন পরই তা বিফলে গেছে। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ফেনী রেল স্টেশন পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্টেশনে সচেতনতার লক্ষ্যে যাত্রীদের ও এলাকাবাসীর মধ্যে লিফলেট বিতরন, ফেস্টুন নিয়ে ক্যাম্পেইন ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে ভলেন্টিয়াররা সচেতনতা সৃষ্টি করেছিল।
চলন্ত ট্রেনে পাথর বা ঢিল ছোঁড়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হলেও বন্ধ হচ্ছেনা দুষ্কৃতিকারীদের আস্ফালন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বহীনতা ও সচেতনতা সৃষ্টির অভাবে এ ধরনের ঘটনার মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দেশের প্রায় অর্ধশত রুটে প্রতিদিন ট্রেন পরিচালনায় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও যাত্রীরা আতঙ্কগ্রস্থ। মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকা সত্বেও চলন্ত ট্রেনে পাথর মারায় প্রতিনিয়ত ট্রেনের চালক-পরিচালক এমনকি যাত্রীরা।

বিভিন্ন সময়ে রেলের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে লিফলেট, ফেস্টুন ও পোস্টারিং -এর মাধ্যমে। এসব ফেস্টুনে লেখা থাকে-‘চলন্ত ট্রেনে পাথর মারবেন না, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করবেন না। চলন্ত ট্রেনে পাথর মারবেন না, একটি পাথর কেড়ে নিতে পারে একটি প্রাণ। ট্রেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ, পাথর মেরে নষ্ট করবেন না। ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর মারা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ’। ‘একটি প্রাণ কেড়ে নিতে পারে একটি পাথর’। ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর মারবেন না’।
‘পাথর মারা দন্ডনীয় অপরাধ’ পাথর মারা তেকে বিরত থাকুন’। ‘পাথর ছুঁড়ে মারব না ,জাতীয় সম্পদ নষ্ট করব না’। ‘পাথর মারা থেকে নিজে বিরত থাকুন, অন্যকেও বিরত রাখুন’। ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর মারবেন না, একটি পরিবারকে ধ্বংস করবেন না’। এতে পুরো দেশবাসীকে মিডিয়ার মাধ্যমে জানাতে চেয়েছেন ‘ট্রেনে ঢিল বা পাথর ছোঁড়ার কারনে শুধু ‘একটি জীবনই নয়, একটি জীবনের কারনে একটি পরিবারও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে’।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু ট্রেনেই নয় ছুঁড়ে মারা পাথর ট্রেনের কোচে লাগার পর বিপরীতে ফিরে আসা পাথরের আঘাতে আশপাশে থাকা মানুষজনও আহত-নিহতের ঘটনা ঘটছে। ২০১৮ সালের মে মাসে খুলনায় কর্তব্যরত অবস্থায় দুষ্কৃতিকারীদের ছোঁড়া পাথরে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর(কর্মাশিয়াল) মোহাম্মদ সিকদার বায়েজিদ। তখন এমন ঘটনার প্রতিবাদে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার(ডিআরএম) দফতরের সামনে ২০১৮ সালের ৬ মে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন রেলের পুর্বাঞ্চলীয় ট্রাফিক বিভাগের শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। রেল কর্মচারীরা আহত হলে কয়েকদিন খুব কড়া নজরদারী থাকে এরপর আবার একই অবস্থানে চলে যায় নিরাপত্তা ও সচেতনতা।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদ ব্যক্ত করতে গিয়ে সালাউদ্দিন নামের এক যাত্রী জানান, রেল লাইনের আশপাশ থেকে চলন্ত ট্রেনকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে একটি জীবন নাশের সঙ্গে সঙ্গে একটি পরিবারও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পদক্ষেপ ও সচেতনতা সৃষ্টির অভাবে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে অঘটন, ঘটছে আহত নিহতের ঘটনায় হারাতে হচ্ছে পরিবারের গৃহকর্তা বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে ।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













