জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার»
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
রবিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, মুনাফ সিকদার নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে ৯ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন গুলিবিদ্ধ মুনাফ সিকদারের বড় ভাই মো. শাহজাহান সিকদার।
এ ঘটনা জানাজানি হবার পর, কক্সবাজার শহর জুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে মুজিব অনুসারীরা। বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরসভার কর্মচারী, বিতর্কিত কাউন্সিলর, সুইপাররা মাঠে নেমে সড়কের মাথায় মাথায় চলাচল প্রতিরোধ করছে। যান চলাচল প্রতিহত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে পৌরসভার ময়লা পরিবহণে ব্যবহার করা পিকআপ, মিনিট্রাক, খনন কাজে ব্যবহার করা স্কেবেটরসহ সব ধরণের যানবাহন গুলো শহরের প্রধান প্রধন সড়কের মাথায় আড়াআড়ি করে রেখে দূর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আগে থেকেই উন্নয়নের নামে শহরের ভেতরের প্রধান সড়ক ও প্রায় প্রতিটি উপসড়ক প্রায় ১০ মাস ধরে এক প্রকার চলাচল অনুপযোগী। সেখানে মোটামুটি চলাচলের যোগ্য কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের সড়কগুলো এবং পৌরসভার অফিসের আশপাশের সড়কগুলো আটকে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, জোর যার মুল্লুক তার-এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে মেয়র অন্য দিকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক- এ জন্য শহরের সব ধরণের অপরাধী নিয়ন্ত্রণ তার ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও সাঙ্গপাঙ্গরা করে থাকেন। দখল বাণিজ্য নিয়ে কাকে গুলি করা হয়েছে সেটা নিজস্ব বিষয়। আইন সবার জন্য সমান-মেয়র বলে কি ওনার জন্য মামলা হতে পারে না? আইনী ভাবে এর প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু মামলা হবার কথা শুনে যেভাবে সকল ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তা কখনো কাম্য নয়। বিক্ষোভকারিদের কথা না শুনলেই হামলা করতে তেড়ে এসেছে। ব্যক্তির জন্য একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের যান বাহন কিভাবে ব্যবহার হয়? তাও আবার জন দূর্ভোগ সৃষ্টিতে? এসব নিয়ন্ত্রণে শৃংখলাবাহিনীও নির্লিপ্ত দেখলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মেয়রের পক্ষে প্রতিরোধ সভায় বক্তব্য দিতে দেখা গেছে বিতর্কিত ও জেল ফেরত কয়েকজন কাউন্সিলর, মানবপাচার মামলার আসামী, চিহ্নিত টোকাই, চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি, ভূমিদস্যুসহ সুবিধাভোগী মহল। সভায় তাদের বলতে শোনা যায়, হত্যা প্রচেষ্টা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ-বিক্ষোভ চলমান থাকবে। বন্ধ থাকবে পৌরসভার সেবা কার্যক্রম ও দোকানপাট।
কক্সবাজার জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম মুকুল জরুরি বিজ্ঞপ্তি বলে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, কক্সবাজার পৌর মেয়র, ব্যবসায়ীদের বিপদে-আপদে যিনি এগিয়ে আসেন, জননন্দিত জননেতা জনাব মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে কক্সবাজার শহরের সকল দোকানপাট পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার জন্য সকল ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ রহিল। সময়:- আজ সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে- কক্সবাজার জেলা দোকান মালিক সমিতি।
এ ঘোষণার দেখার পর কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সিনিয়র নেতা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে ভুলবুঝাবুঝিকে পূজি করে জামায়াত-বিএনপি সব সময় সুযোগ নেয়, এটা তারই প্রমাণ। দোকান মালিক সমিতির নামে মুকুলরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সবসময় সন্তর্পনে চলে সেটাই প্রতিয়মান হলো।

তবে, এসব ঘটনার সাথে তার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি কাউকে প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করতে বলিনি। কিন্তু ভালোবেসে হয়তো আমার নেতা-কর্মীরা মাঠে নামতে পারে। এটা তাদের অধিকার, ভালোবাসা। আমার স্পষ্ট ঘোষণা হলো, আমাকে মিথ্যা ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় মার্কেটের সামনে আড্ডারত মুনাফ সিকদারকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মুনাফ সিকদারের অবস্থা আশংঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত মুনাফ সিকদার (৩২) শহরের পেশকারপাড়া এলাকার শাহাব উদ্দিন সিকদারের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং শহর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। এসময় কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর ছনখোলা এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. তারেক (২২) নামের এক পথচারিও গুলিবিদ্ধ হন।

গুলিবৃদ্ধ মোনাফ সিকদার একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেন- কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তাকে গুলি করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা গুলি করার সময় আমাকে বলছে- মুজিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগছো? এ বলে পেছন থেকে গুলি করে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অবশেষে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
অপরদিকে, মেয়র মুজিবের পক্ষে করা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচী ৩ ঘন্টা পর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় জেলা আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন নেতাদের আশ্বাসে বিক্ষোভ কর্মসূচী প্রত্যাহার হয়েছে।
উজ্জ্বল বলেন, মুজিবুর রহমানের নামে হয়রানিমূলক মামলা করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা সন্ধ্যা থেকে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ শুরু করে। এতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শহরে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
এ নিয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলাপ হয়েছে। পরে জেলা আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন নেতাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মিরা বিক্ষোভ কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছেন।
পৌর আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, মামলা দায়ের পরবর্তী উদ্ভুদ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভা রয়েছে। এতে আলাপ-আলোচনার পর আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













