২৪ অক্টোবর ২০২৫

বাপ-দাদার ভিটা আর হারাতে চাইনা, জোর করলে প্রতিহত করব : এলাকাবাসী

আনোয়ারা প্রতিনিধি»

আনোয়ারায় মেরিন ড্রাইভ-এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশ সম্পর্কিত সমীক্ষা দলের সাথে স্থানিয়দের মতবিনিময় সভায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানান, আমরা বাপ দাদার ভিটা অনেক হারিয়েছি, আর হারাতে চাইনা। গ্যাস পাইপ লাইন, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ সরকারি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে আনোয়ারার মানুষ ইতিমধ্যে অনেক জমি-জমা হারিয়েছে। নতুনভাবে আর কোনো ভিটেবাড়ি হারানোর মত অবস্থা আমাদের নেই। আর আগামীতে কেউ আমাদের ভিটেবাড়ির উপর কোনো প্রকল্প জোর করে চাপিয়ে দিলে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করব। সোমবার বিকালে দক্ষিণ বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, সামাজিক ও পূণর্বাসন বিশেষজ্ঞ ওয়ালী দাদ খান, রাহাত খান মজলিশ, পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অনুজ ভৌমিক, লিঙ্গিয় ও সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ নাজমুন নাহার, বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, আওয়ামীলীগ নেতা এম এ রশিদ, দক্ষিণ বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এ সেলিমসহ বন্দর এলাকার সর্বস্তরের জনগন। জানা যায়, মিরসরাই থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বিদেশী একটি সংস্থা এই সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছেন। তারই অংশ হিসেবে গতকাল আনোয়ারায় সমীক্ষা দলটি স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করেন।

মূলত, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি মিরস্বরাই থেকে পতেঙ্গা উপকূল ধরে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিতর দিয়ে আনোয়ারার দক্ষিণ বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে একটি ইউটার্ণ দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের সাথে সংযুক্ত হবে। সেখান থেকে বাঁশখালী উপকূল দিয়ে কক্সবাজারের সাথে গিয়ে মিলিত হবে। এখানে দক্ষিণ বন্দর এলাকায় যেখানে ইউটার্ণ হবে সেখানে একটি মাজার, দুটি বিদ্যালয়, দুটি মসজিদসহ অসংখ্য মানুষের বাড়ি-ঘর বিলীন হবে। যা স্থানীয় মানুষদের ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। আনোয়ারায় এর আগে দুটি গ্যাস পাইপ লাইন, কেইপিজেড,চায়না ইকোনমিক জোন, বঙ্গবন্ধু টানেলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্পে হাজার হাজর মানুষের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করায় মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে এখনো এল এ শাখা থেকে ভিটেবাড়ির টাকা তুলতে পারেননি। কেউ কেউ টাকা পেলেও তা দিয়ে অন্যত্র জমি কিনে ঘর করার সেই অবস্থা নেই। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ভাড়া বাসায় বা উদ্বাস্তুর ন্যায় এখানে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে এখন আর নতুন করে কোনো প্রকল্পের কথা শুনলেই বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন জনসাধারণ।

এ বিষয়ে স্থানীয় বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, এখানে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে সেটার জন্য কয়েকটি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো যাচাই না করে হুট করে ইউটার্ণের বিষয়টা সমীক্ষা কেন করা হচ্ছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা চাই যেভাবে মানুষের ঘর-বাড়ি,মসজিদ -মাদ্রাসা,স্কুলের ক্ষতি না হয় সেটাই প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করা হোক।

সমীক্ষা দলের সামাজিক ও পূণর্বাসন বিশেষজ্ঞ ওয়ালীদাদ খান বলেন, আমরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য এসেছি। এখানে কী পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হকে পারে। বা এলাকার সাধারণ মানুষের মতামত কি সেটা জানতে এই মতবিনিময় সভা। আমরা বিষয়টা উর্ধ্বতন মহলে জানাব। তারাই পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন