সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার»
‘আঁই চলাফিরা গরিত নপারি। কিন্তু আঁর ওগ্গা ভোড়র কারনে যদি নৌকা মার্কা ন-জিতে? এতল্লাই শেখর বেটি হাছিনার নৌকায় ভোট দিত আঁইস্সি। আঁরে এলাকার পুঁয়াইন ও পুলিশে চিয়ারত বোয়াই পালকি কোলা গঁরি ভোট দিয়াইয়ে।’ (আমি চলাফেরা করতে পারি না। কিন্তু আমার একটা ভোটের কারণে যদি নৌকা হেরে যায়? সে কারণে শেখ মুজিবের মেয়ে হাছিনার নৌকায় ভোট দিতে এসেছি। এলাকার ছেলেরা পুলিশের সহায়তায় চেয়ারে পালকি ভঙ্গিতে এনে ভোট দেয়ালো।)
কক্সবাজারের চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পূর্ব দরবেশ কাটা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা বিলকিস বেগম (৭৪) এসব কথা বলেছেন।
তার বয়েসি ফাতেমা বেগম এসেছেন লাঠিতে ভর করে। তবে, তিনি এসেছেন এলাকার নাতি অ্যাটভোকেট রবিউল আহসান লিটনের আনারস প্রতীকে ভোট দিতে। তার ছেলে আলী আকবরের একটি মামলায় আন্তরিক ভাবে আইনী সহায়তা দিয়েছেন লিটন। তার প্রতিদান হিসেবেই নাতনির সাথে ধীরে ধীরে এসে ভোট দিয়ে ফিরছেন তিনি। তিনিও ৫নং ওয়ার্ড পূর্ব দরবেশ কাটা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

এ দুই বৃদ্ধার মতোই নারী ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে স্ব স্ব এলাকার কেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। নিত্যদিনের কাজ সারার পর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) চলমান নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার ১০টি এবং পেকুয়ার ৬ ইউপিতে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এসব ইউপি ছাড়াও কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এখানকার দুটি কেন্দ্রসহ চকরিয়া-পেকুয়ার ১৬ ইউপির প্রায় দেড়শ কেন্দ্রের সবখানেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় সকাল ৮টা হতে শুরু হয়ে চলছে ভোট গ্রহণ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রয়েছে পুলিশ-আনসার বাহিনী। টহল জোরদার করেছে র্যাব ও বিজিবি। সাথে রয়েছেন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটগণ।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদত হোসাইন বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছেন অর্ধ শতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একাধিক প্লাটুন বিজিবি আর ৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য। এছাড়াও টহলে রয়েছে র্যাব-১৫ এর একাধিক মোবাইল টীম। সবখানেই সুশৃঙ্খল পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে।

সূত্র মতে, চকরিয়ার ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭৩, সংরক্ষিত মেম্বার পদে ১৩৩ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৮৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ মনোনীত ১০ প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৬০ জন। প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। বহিস্কারের পরও নির্বাচনী মাঠ থেকে সরেনি তারা।
একইভাবে, পেকুয়ার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৫০ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৮৫ জন এবং মহিলা সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। পেকুয়ার ৬ ইউপির ৫৪ কেন্দ্রে বুথ ২৮৫টি।
র্যাব ১৫ এর সিইও লেফটেন্যান্ট কর্ণেল খাইরুল ইসলাম সরকার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে মাঠে রয়েছি আমরা। সাথে টহলে রয়েছে বিজিবিসহ অন্য শৃঙ্খলা বাহিনীও। যেকোন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা কঠোর ভাবে প্রতিহত করার নির্দেশনা দেয়া আছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ বেআইনি ভাবে জোর খাটিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠিন হতে নির্দেশনা দেয়া আছে।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













