২৩ অক্টোবর ২০২৫

ঐতিহাসিক মাঠে আরেক ইতিহাস

মাকসুদ আহম্মদ »

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কান্না যেন এক নেতাকে ঘিরেই। সকলেই কাঁদছে। তাঁর নাম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। যিনি ছিলেন সাবেক তিন তিন বার নির্বাচিত ও চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র। চট্টগ্রাম উন্নয়নের কান্ডারী এ মেয়র এখনো মানুষের অন্তরে অন্তরে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন উন্নয়নশীল মনমানসিকতার। জন কল্যাণের কারণেই মানুষের মাঝে এতো জায়গা করে নিয়েছেন এই নেতা।

চট্টগ্রামে এমন কোন নেতার জন্ম আদৌ হয়নি আগামীতেও হবে কিনা জানা নেই নগরবাসীর। তবে চট্টগ্রাম উন্নয়নের ধারক ও বাহক বলা হতো মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। এর কারণ শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়, তিনি চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কম্পিউটার কলেজসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়ে গেছেন যা কোন সরকার আমলেও স্বাক্ষর রাখতে পারেনি। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এক কথায় তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছে ১৯৭৫ সালে। আর চট্টগ্রামবাসী প্রথম নগর পিতাকে হারিয়েছে জাতির পিতার ৪২ বছর পর। ফলে নগর পিতাকে হারিয়ে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে চট্টগ্রামের বুকে নেমে আসে আরেক কাল রাত্রি। চট্টগ্রামের নগর পিতা ও তিন তিনবার নির্বাচিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

সেই ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে নগরীর লালদীঘি মাঠকে ঘিরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে চট্টগ্রামের অভিভাবক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামাজে জানাযা আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ঐতিহাসিক মাঠে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এই বীরের জানাযার মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেক ইতিহাস। বাঙালির ইতিহাস এবং সোনার বাংলার ঐতিহ্য সবই ছিল এই নেতার মাঝে। শুধু তাই নয়, ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বেরে জন্ম নেয়া এই অভিভাবকের কাকতালীয়ভাবে জীবনাবসান হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসিম্বরেই।

যদিও লালদীঘি মাঠের সামনে থাকা পেট্রোল পাম্পের সামনেই বীর এই মুক্তিযোদ্ধার নিথর দেহের কফিন রাখা হয়েছিল। কিন্তু জানাযার নামাজে ইমামের পেছনে তথা ডানে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত আর বামে কোতয়ালী মোড় পেরিয়ে ফিরিঙ্গী বাজার সড়কেও মানুষ দাঁড়িয়েছে নামাজ আদায় করতে। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চির বিদায় দিতে উপস্থিত হয়েছেন লাখো মুসল্লি ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন।

স্মৃতির আঙ্গিনায় এখন নগর পিতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মনের পিঞ্জিরায় থেকে গেলেন চিরতরে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হারিয়েছে এই মহান নেতাকে। চট্টগ্রামের কান্ডারী মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে চট্টগ্রামবাসী এখন অনিশ্চয়তার সাগরে ভাসছে এমন মন্তব্য ২০১৭ সালের ১৫ ভিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে জানাযায় আসা সর্বস্তরের মানুষের। চট্টগ্রামকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আর অন্যায় ও অত্যাচার দূর করতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কোন বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম হারিয়েছে নগর পিতার ন্যায় অভিভাবক সেইসঙ্গে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল মেহনতী মানুষের পক্ষের কণ্ঠস্বর মহিউদ্দিন চৌধুরী।

২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে জননন্দিত সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর না ফেরার দেশে চলে গেলেন। নগর পিতার এই যাওয়া পুরো চট্টগ্রামবাসীকে আবারও নাড়া দিয়েছে। শিউরে উঠেছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভালবাসায় সিক্ত মানুষগুলোর শরীরের পশমও। তবে ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নগরবাসীর মাঝে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারানোর আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালের আইসিইউতে, ঠিক তখন থেকেই গভীর রাত পর্যন্ত চট্টগ্রামের নবীণ-প্রবীণ সাংবাদিক ও গুনাগ্রাহী হাসপাতালের বারান্দায় ঠাঁই দাড়িয়ে ছিলেন।

অবশেষে রাত তিন টায় চির নিদ্রায় চলে গেলেন তিন তিনবার নির্বাচিত চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকসহ মোবাইলের কলে কলে তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে। এমনকি ঘুম থেকে উঠে জেনে গেলেন নগরপিতা হারালো নগরবাসীও। মানুষের চাপ যেন ক্রমশ বাড়তে থাকে হাসপাতাল, মেয়রের চশমা হিলস্থ বাসভবনে এমনকি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের দারুল ফজল মার্কেটের সামনে।

হাসপাতাল থেকে সকলে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে থাকা চশমা হিলস্থ মেয়র গলির বাসভবনকে ঘিরে মানুষের যাত্রা শুরু হলেও শেষ কখন হবে তা কেউ জানেননা। কারন ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে হতাশায় ভুগেছে চট্টগ্রামবাসী। ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার আসরের পর লালদীঘি মাঠে আর সন্ধ্যায় চশমা হিল সংলগ্ন শেখ ফরিদ (রা.) এর মাজার প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত এই নেতাকে বিদায় জানাতে। দাফনের শেষেও ছিল মানুষের পদচারনায় নগরীতে আবেগী মনের ক্রন্দন। সবার কথা একটাই চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে বলার আর কেউ থাকলেন না। আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী।

লেখক : বিশেষ প্রতিবেদক, বাংলাধারা ডটকম

আরও পড়ুন