২৯ অক্টোবর ২০২৫

ঘরের বারান্দায় টবেই সীম

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

বাড়ির ছাদে ছোট্ট পরিসরে কিংবা ঘরের বারান্দায় বারি-৫ জাতের সীমের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট হবে। বাড়ির বারান্দায় টবে বা বালতিতে এ জাতের সীমের চাষ করা যায়। এই সীমের গাছ খাটো প্রকৃতির। ছোট্ট পরিসরেই লাগানো সম্ভব। তবে মাচা ছাড়াই ছোট খুঁটি দিয়ে চাষ করা যায়। অবাক হবার কিছু নেই। পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও রৌদ থাকলে বারি-৫ জাতের সীম গাছ মাচা ছাড়াই ঘরের বারান্দায় লাগানো সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (বারি) পাহাড়তলীস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে এই সীমের বীজ পাওয়া যায়।

বীজ বপনের পর থেকে মাত্র এক মাসের মধ্যেই এই সীমের চারা এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতায় পরিণত হয়। সেই সঙ্গে ফুলও চলে আসে গাছে। এই প্রজাতীর সীম গাছে প্রচুর পরিমাণে সীম পাওয়া যাবে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে। তবে প্রায় তিন মাস একনাগাড়ে এই সীমের ফলন পাওয়া যাবে। এছাড়াও সারদেশে সবজি চাষের এলাকায় এ জাতটি চাষ করা। বীজের হার প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ কেজি। এই সীমের ফলন প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন।

পাহাড়তলীস্থ কুষি গবেষণা কেন্দ্রে সীমের চাষ সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, সীমের জন্য গাছ দেখা যাচ্ছে না। সীমের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে গাছ। মাত্র এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতার গাছেই সীম ধরেছে। দেখে অবাক হবার মত।

ছোট বেলায় সবাই দেখেছেন বাজারে প্রায় একফুট উচ্চতার সীমের চারা গাছ বিক্রয় হয়। কিন্তু পাহাড়তলীস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে বারি-৫ জাতের সীমের গাছে ব্যাপক ফলন দেখা গেছে মাত্র দেড় ফুট গাছেই। তবে মাঠের পরিচর্যা আর গাছ টিকেয়ে রাখার কৌশলই চাষীদের জন্য বাম্পার ফলনের একটি সবজি। সীম সবজি হিসেবে বাংলাদেশের সর্বত্রই বানিজ্যিকভাবে ও বসত বাড়ীতে চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বারি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ছয় জাতের সীমের মধ্যে ‘বারি সীম- ৫’ জাতটি খাট প্রকৃতির। গাছের উচ্চতা প্রায় ৩৫-৪৫ সে.মি.। প্রতি গাছে ৫০-৬০ টি সীম পাওয়া যায়। প্রতিটি সীম ৯ থেকে ১০ সেমি. লম্বা হয। গায়ের সবুজ রং , নরম মাংসল, কম আঁশযুক্ত হয় এই সীম। চারা লাগানোর ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। তবে ৭৫-৮৫ দিন পর্যন্ত এই প্রজাতির সীম সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি জনপ্রিয় করা গেলে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবে।

চিকিৎসকদের মতে, এই সীমে দেহের জন্য অতিমাত্রায় ক্যালসিয়াম রয়েছে। এই সীমে প্রচুর ভিটামিন সি ও পর্যাপ্ত ক্যারোটিন থাকায় মানব দেহের জন্য উপযোগী। বারি-৫ সীমে প্রোটিনের সমৃদ্ধতা এবং আঁশ জাতীয় উপাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কচি শুটি ও পরিপক্ক বীজের প্রতি ১০০ গ্রামে যথাক্রমে আমিষ ৩ দশমিক ৮ গ্রাম ও ২৫ গ্রাম, শ্বেতসার ৮ দশমিক ০ গ্রাম ও ৬০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১০ গ্রাম ও ৬০ গ্রাম এবং লৌহ ১ দশমিক ৭ গ্রাম ও ২ দশমিক ৭ গ্রাম রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত ‘বারি সীম- ৫।এটি এমন একটি জাত যা প্রচুর পুষ্টিগুন সম্পন্ন এবং অনেকটান খাটো প্রকৃতির।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চাষী মোহাম্মদ হারুন সীমের এই জাত প্রসঙ্গে বলেন, এ জাতের সীমের গাছটি খাট প্রকৃতির। হাতের নাগালে থাকে ফলন। ফলে এই সীম চাষে সহজেই তা সংগ্রহ করা যায়। এছাড়াও কচি অবস্থায় এই সীমে আঁশের পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ায় রান্না করা সহজ। মাটি মাড়াই থেকে শুরু করে চারা রোপন এমনকি আগাছা উপড়ানো পর্যন্ত মাঠে কাজ করে শ্রমিকরা। খাট জাতের এ সীম সবারই নজর কেড়েছে। তাছাড়া স্বল্প সময়ে সীমের উৎপাদন সবার মাঝে আনন্দ যোগায়। এই জাতের সীম স্বপরাগায়িত উদ্ভিদ। ফলে চাষীরা নিজেরাই তাদের উৎপাদিত সীম থেকে পরবর্তী মৌসুমে চাষের জন্য বীজ সংরক্ষণ করতে পারেন। কম সময়ে বেশী ফলনের কারনে এ জাতের সীম চাষীদের ছাড়াও গৃহিণীদের দৃষ্টি কেড়েছে।

আরো জানা গেছে, এই জাতটি তুলনামূলকভাবে রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী। তবে এফিড নামের এক ধরনের পোকা পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলার পাশাপাশি ভাইরাস রোগ ছড়ায়। এক্ষেত্রে প্রতিষোধক হিসেবে এডমায়ার নামক কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হয়। তবে প্রতি লিটার পানিতে দশমিক ৫ মিলি হারে মিশিয়ে প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর ২ বার স্প্রে করলে পোকা সহজেই দমন হয়ে যায়।

আরও পড়ুন