৩০ অক্টোবর ২০২৫

শিশুর লিঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা সৎ মায়ের!

ফাহিম আল সামাদ »

শিশুর কাছে নিরাপদ আশ্রয়ের একটি নাম ‘মা’। কিন্তু সেই মা যখন হয়ে ওঠে শিশুর জীবনে আতঙ্কের নাম তখন সেই শিশুর বেড়ে ওঠা যেন ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের রূপ নেয়। এমনই এক দুঃস্বপ্নের শিকার হয়েছে শিশু ছুফিয়ান (৬)। আড়াই বছর বয়সে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে সৎ মায়ের অত্যাচারের। অত্যাচারের এক পর্যায়ে সৎ মা জান্নতুল পিয়ারা শিশু ছুফিয়ানের লিঙ্গ প্রায় কেটে দেওয়ার মতো বর্বর কাজও করেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাস এলাকার একটি কলোনীতে। এ বিষয়ে শিশুর পিতা মো. ওসমান গণি বাদী হয়ে ২০১৮ সালে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জান্নতুল পিয়ারাসহ আরও ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি আসামিরা হলেন— সুনামগঞ্জ জেলার মৃত সুরুজ আলীর ছেলে আব্দুল হাকিম, আব্দুল ছাত্তার ও আবু হানিফ। শিশুর পিতা ওসমান গণি পেশায় একজন দিনমজুর। কেবল আক্রোশের জের ধরেই আসামিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।

জানা যায়, শিশুর প্রকৃত মা ফাতেমা খাতুন অর্থিক দৈন্যতার কারণে দুই শিশু রেখে ওসমান গণিকে তালাক দিলে শিশুর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে জান্নাতুল পিয়ারাকে বিয়ে করেন। সংসারে সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও শিশুর প্রতি জান্নাতুল পিয়ারার মনোভাব শুরু থেকে আক্রোশপূর্ণ ছিল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন (৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮) বাদী কাজ শেষে বাসায় ফিরে দেখতে পান আসামিরা শিশুকে হত্যার জন্যে তার গলা চেপে ধরে। এসময় শিশুর পুরুষাঙ্গ ছুরি দিয়ে প্রায় কেটে ফেলে এবং একসময় শিশুর কান্নার মাত্রা বেড়ে গেলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তারা নানা রকম হুমকি প্রদান করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে বাদী তার সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

শিশুটির পিতা ওসমান গণি বাংলাধারাকে জানান, ‘আমি বাসায় না থাকা অবস্থায় ছুফিয়ানের প্রতি তার সৎ মা শুরু থেকেই অত্যাচার করতো। বাচ্চা কান্না করলেই সে বাচ্চাকে মারধর করতো। রাতে বাসায় ফিরলে ছেলেকে কান্নারত অবস্থায় দেখতাম প্রায়ই। ঘটনার দিনও আমি বাসার বাইরে থেকে ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। বাসায় প্রবেশ করে দেখি আমার ছেলেকে তারা হত্যার উদ্দেশে গলা চেপে ধরে। এবং আমি লক্ষ্য করি তার লিঙ্গের চতুর্দিকে গোলাকার করে কাটা। কেবল বাচ্চার কান্নার আওয়াজে ক্ষুব্ধ হয়েই তারা এই কাজ করে।’

তিনি অভিযোগ করেন, আর্থিকভাবে ক্ষমতাবান হওয়াতে ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মেডিকেল রিপোর্ট বদলে ফেলেন। একটি শিশুর পক্ষে দুর্ঘটনাবসত নিজের লিঙ্গে এমন আঘাত করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাকে আর আমার ছেলেকে হুমকি দিয়েছে বেশ কয়েকবার। আর্থিকভাবে ক্ষমতাবান হওয়ায় তারা মেডিকেল রিপোর্টও পাল্টে ফেলে। এমনকি তারা সকলেই এখন জামিন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে।’

এ প্রসঙ্গে শিশু নির্যাতন মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বাংলাধারাকে বলেন, ‌‘মামলার এজাহার ও তদন্তকারী কর্মকর্তার চার্জশীট অনুযায়ী, আসামিরা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামিরা জামিনে থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে শিশুটির বাবা জানিয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি মামলার নির্ধারিত দিন ধার্য রয়েছে।’

শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শিশুর পিতা জানান, শিশুটির এখন প্রস্রাবে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া শারীরিকভাবে সে নানা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। বাকি বাচ্চাদের সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপনে করতে অসুবিধা হচ্ছে তার। আসামিদের যথাযথ শাস্তি এবং তার সন্তানের সুন্দর স্বাভাবিক ভবিষ্যতই চাইছেন শিশুর পিতা ওসমান গণি।

আরও পড়ুন