২৫ অক্টোবর ২০২৫

বন্ধ হচ্ছে না শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি

শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »

প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসাকালীন সময় প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তার অসদাচরণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রবাসীদের অভিযোগ, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পুলিশের সাথে দালাল ও টাউট শ্রেণী পদে পদে তাদের হয়রানি করে। হাতিয়ে নেয় মূল্যবান জিনিসপত্র। নগদ ডলার, পাউন্ড চায়। না দিতে পারলে হেনস্তা শিকার হতে হয়। বিমানবন্দরে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ ধরনের ঘটনার কথা জানানো হলে উল্টো ভুক্তভোগীকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। শুধু বিদেশফেরত যাত্রীই নন, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রেও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ প্রবাসীদের।

অথচ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া থাকলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এ হয়রানি। নিরাপত্তা তল্লাশির নামে যাত্রীদের এ ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের লাগেজ সংগ্রহে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় সংঘবদ্ধ চক্র লাগেজ গায়েব করে ফেলে।

এছাড়াও বিমানবন্দরে স্থান স্বল্পতা, বোর্ডিং ব্রিজ, বাস-ট্রলির স্বল্পতা, ইমিগ্রেশন ও হেলথ ডেস্কে লোকবলের অভাবে ধাপে ধাপে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের।

প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ওপর এই হয়রানি শুরু হয় বিমান বন্দরে পা রাখার পর থেকেই। বিমান বন্দরে নেমে ইমিগ্রেশন পুলিশের আনুষ্ঠানিকতার জন্য লাইনে দাঁড়াতেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন এসে অবৈধ কিছু আছে কিনা জানতে চায়। সেখান থেকে নেতিবাচক জবাব পেলে তারা লাগেজের কাছে চলে যায়। স্ক্যানিং মেশিনে লাগেজ দিয়ে তল্লাশি চালানোর পরও ব্যাগ-সুটকেস খুলে দেখতে চায়। লাগেজে অবৈধ তেমনকিছু না পেলেও শুল্কযোগ্য জিনিস আছে এই অজুহাতে সেগুলো ম্যানুয়ালি তল্লাশির নামে অনেক ক্ষেত্রে সাজানো জিনিসপত্র তছনছ করা হয়। বিমান বন্দরে যা ভুক্তভোগিদের জন্য এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। দেশের বাড়িতে হয়তো কারো জন্য একটি খেলনা বা মোবাইল সেট কিনে এনেছেন কেউ। বিমান বন্দরে কর্মরত কোন অসৎ কর্মচারির তার ওপর চোখ পড়লে এজন্য বাড়তি পয়সা শুনতে হয়।

গত ৯ জানুয়ারি সারজা থেকে মুন্না নামের এক যাত্রী দেশে ফেরেন। আসার সময় তার ব্যাগে ছিল শীতের দুটি কম্বল ও দুটি মোবাইল সেট। ভেতরে অবৈধ মাল আছে— এই ভয় দেখিয়ে এক কর্মচারি তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ক্ষুব্ধ মুন্না এ অভিযোগ বিমান বন্দরের একজন কর্মকর্তার কাছে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।

অপরদিকে বিমান বন্দরের টার্মিনালের বাইরে প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজন অনেক সময় অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। তাদেরও হতে হয় নিয়মিত নিগ্রহের শিকার। কাস্টমস, পুলিশ ও টাউট-বাটপাড়দের অত্যাচারে তারা দাঁড়াতে পারেন না। বাইরে অপেক্ষমাণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার চালকদের অত্যাচারও সীমাহীন। দুইশ’ টাকার গন্তব্যের ভাড়া তারা এক হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়ে বসে। লাগেজ নিয়ে টানাটানির ফলে তৈরি হয় এক অপমানজনক পরিস্থিতি। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ আছে বলে মনে হয় না।

প্রসঙ্গত, হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্লাইট অবতরণ করে। এ সকল ফ্লাইটের মোট যাত্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই প্রবাসী বাংলাদেশি। এক শ্রেণির চোরাচালানিও এই বিমান বন্দর ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু বিমান বন্দরে কর্মরত কিছু কর্মচারিকে প্রবাসী যাত্রীদের নিয়েই বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) এইচ কবির বলেন, কোনো যাত্রী অবৈধ কোনো পণ্য সামগ্রী নিয়ে কাস্টমস সেটি আটক করে তবে অন্যথায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। বিমান বন্দরে যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মোবাইল আনার বিষয়ে তিনি জানান, একটি যাত্রী সর্বোচ্চ ৮টি মোবাইল শুল্ক পরিশোধ করে নিতে পারবেন। তবে ২টি মোবাইল বিনা শুল্কে নিতে পারবেন।

বাংলাধারা/এসএএআর

আরও পড়ুন