২৫ অক্টোবর ২০২৫

বিমানে নিরাপত্তা নিশ্চিত যেভাবে

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

যে কোন অভ্যন্তরীন ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন বিমানের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশের ইমিগ্রেশন ও সিভিল এভিয়েশন। যে কোন ফ্লাইটের টিকেট কেনা থেকে শুরু করে বিমানে ওঠা পর্যন্ত নতুনদের জন্য এক বাস্তব অভিজ্ঞতা। যা রেল, সড়ক বা নৌ পথের যানে সম্ভব নয়। বিমানের যাত্রীদের আলাদা নজরদারিতে রাখা হয়। অভ্যন্তরীন বিমানে যাত্রা করতে শুধু ভোটার আইডির উপর নির্ভর করে টিকেট কেনা ও বিমানে ওঠার সুযোগ থাকে যাত্রীদের। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বিমানে যাত্রা করতে হলে পাসপোর্ট ও গমনেচ্ছু দেশের ভিসা বাধ্যতামূলক। কারণ পাসপোর্টেই বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে ভিসা লাগিয়ে দেয়া হয়।

যে কোন ভিসা লাগানোর আগে দূতাবাসে গিয়ে সুনির্দিষ্ট যাত্রীকে তার পরিচয়, নির্দিষ্ট দেশে গন্তব্যের কারণ উল্ল্যেখপূর্বক ভোটার আইডি দিয়েই ভিসার আবেদন করতে হয়। এছাড়া ভিসা নিতে পারে না। ভিসা নিলেও টিকেট কেনার আগেই আবারও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ট্রাভেল এজেন্সি থেকে বারবার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভোটার আইডির তথ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। ফলে যাত্রী নিয়ে নানা সন্দেহ থাকে না ট্রভেল এজেন্সি বা এয়ারলাইন্সের কাউন্টারগুলোর।

যে কোন এয়ারপের্টে প্রবেশের দুটি পথ রয়েছে একটি অভ্যন্তরীণ ও অন্যটি আর্ন্তজাতিক। দুটো পথেই এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের আগে সার্চওয়ে বা গেট দিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে প্রবেশ করতে হয়। এসময় যাত্রীর সঙ্গে থাকা লাগেজ অব্যশ্যই স্ক্যানার মেশিনে প্রবেশ করানো হয়। যা বিমানের ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্য মনিটরে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। কোন ধরনের ধারালো অস্ত্র তা যদি সুইও হয়ে থাকে তা বের করে রেখে দেন স্ক্যানার মেশিনের গোড়ায় থাকা সিকিউরিটি কর্মকর্তা।

এরপর বোর্ডিং পাস নেয়ার সময় যাত্রীকে ঘোষণা দিতে হয় ‘ব্যাগে কোন অস্ত্র, ধারালো অস্ত্র বা তরল কোন পদার্থ’ নেই। সেক্ষেত্রে তা পারফিউমও হলেও হ্যান্ড লাগেজে নেয়া যাবে না। যাত্রীরা মাত্র ১০ কেজি ওজনের নিচে থাকা হ্যান্ডব্যাগ বা লাগেজকে হাতে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আর ১০ কেজির ওপরে ওজন থাকা লাগেজ অবশ্যই বিমানের কার্গোতে দিতে হয় বোর্ডিং পাস ইস্যুর মাধ্যমে। ২০ কেজির ওপরে হলে অতিরিক্ত ফি দিয়ে ট্যাগ লাগানো হয় টিকেট ও সিট নম্বর অনুযায়ী। যা বেল্টের মাধ্যমে বিমানের কার্গোতে পাঠানো হয়।

বোর্ডিং পাস নেয়ার পর ইমিগ্রেশন করতে হয় কাউন্টারে দাঁড়িয়ে। সেখানেও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইমিগ্রেশন করে। পাসপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের পর যাত্রীর ছবি, নির্দিষ্ট দেশে গন্তব্যের কারণ ও কতদিনের অবস্থান তাও যাত্রীর কাছ থেকে জেনে নেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর বিমানে ওঠার আগে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সময় আবারও হাতে থাকা ব্যাগ স্ক্যান করা হয়। এসময় কোন ক্রমে যদি কোন ধাতব ও তরল পদার্থ স্ক্যানারে ধরা পড়ে তাহলে ওই দ্রব্য জব্দ করে নেয় এয়ার এ্যাভিয়েশনের সিকিউরিটি কর্মকর্তা।

এরপর যাত্রীদের অপেক্ষাগারে ওই যাত্রীকে সন্দেহের নজরে রাখে সিভিল এ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তারা। বিমানে যাত্রী ওঠার আগেই বিমানের বোর্ডিং পাস ইস্যুকারী কর্মকর্তারা গেটে হাজির থাকেন। কারন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বিমানে উঠছেন কিনা তা আরেক দফায় পাসপোর্টের ছবি ও টিকেটের সঙ্গে মিল রয়েছে কিনা তা দেখে নেন এয়ারপোর্টে কর্মরত এয়ারলাইন্সের লোকজনসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা।

যেকোন বিমানে প্রবেশের সময় দরজায় বিমান বালা যাত্রীদের স্বাগতম জানিয়ে যাত্রীদের সিট নির্দেশনা দিয়ে আসন গ্রহণে সহযোগিতা করেন। এমনকি হ্যান্ড লাগেজগুলো প্রত্যেক সিটের উপর তথা যাত্রীর ঠিক মাথার উপরে থাকা লাগেজ বক্সে রাখতে সহায়তা করেন। বিমান উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে কেবিনক্রু বিমানের পাইলট, কো-পাইলট, কেবিনক্রু ও বিমান বালাদের নাম জানিয়ে দেন যাত্রীদের। এছাড়াও বিমান উড্ডয়নের সময় যাত্রীদের মোবাইলসহ যে কোন ডিভাইস বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা ও সেইফটি সম্পর্কে অবগত করেন। তবে বিমান উড্ডয়নের পর হ্যান্ড লাগেজ কেবিনেটগুলো অটোমেটিক লক করে দেওয়া হয়। ফলে কোন যাত্রী বিমান অবতরন না করা পর্যন্ত ওই লাগেজ থেকে কোন ধরনের জিনিসপত্র নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এর আগে কোন কিছুর প্রয়োজন হলে কেবিন ক্রু’কে অবহিত করতে হয়।

একইভাবে বিমান অবতরনের সময় আবারও সতর্কতা বাণী শুনিয়ে যাত্রীদের আসন ত্যাগের প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করেন সেইসঙ্গে হ্যান্ড লাগেজ নিতে কেবিনেটের অটো লক খুলে দেন। ফলে প্রত্যেক যাত্রী অনায়াসে স্ব স্ব লাগেজ নিতে কোন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। বিমান থেকে নেমে যাত্রীদের আবারও ইমিগ্রেশন করতে হয়। এবার ইমিগ্রেশনে আবারো পাসপোর্ট, ভিসা চেক করে ছবি তুলে রাখা হয় যাত্রীদের। তবে এই ইমিগ্রেশনে দুয়েকটি প্রশ্ন করা হয় যাত্রীদের। যেমন— কি কারনে ভিসা নেয়া হয়েছে, কতদিন এবং কোথায় অবস্থান নিবেন এবং অবস্থানকালীন হোটেল বা হাসপাতালের ঠিকানা বা কোন ব্যাক্তি বা আত্মীয় স্বজনের পরিচয় দেয়া হলে ফোন নম্বর পর্যন্ত লিখে দিতে হয়। ইমিগ্রেশন শেষে বিমানের কার্গোতে নিয়ে আসা লাগেজের জন্য বিদেশি এয়ার পোর্ট হলে কয়েক মিনিট আর ঢাকা বা চট্টগ্রামের এয়ারপোর্ট হলে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন থেকে লাগেজ বেল্ট পর্যন্ত নানা হয়রানির শিকার হতে হয় যাত্রীদের। এরপর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের বিচিত্র রকমের হয়রানি চলে এ দুটি এয়ারপোর্টে। ট্যুরিস্ট ভিসায় ২/৩ দিনের মধ্যে দেশে ফেরত এলেই এর কারন উল্ল্যেখ করতে হয়। ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ইমিগ্রেশন) যাত্রীকে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলে হ্যনস্থা করার চেষ্টা করেন। আবার একজন যাত্রীর কাছে একাধিক লাগেজ থাকলেও সমস্যা। কাস্টম্স এর লোকজন প্রত্যেক যাত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেন ওই যাত্রীর মধ্যে কোন ধরনের তাড়াহুড়া আছে কিনা। তবে কোন ধরনের আগাম তথ্য ছাড়াই যাত্রীদের লাগেজ আটক, খুলে দেখাসহ পুরো লাগেজ জগাখিচুড়ি না বানালেই নয়। কোন কিছু না পাওয়ার পর যাত্রীকে কিভাবে বের করে দিবে ওই অপেক্ষায় জোর খাটিয়ে খোলা লাগেজ নিয়ে কাস্টমস দফতর পার করতে বাধ্য করে যাত্রীদের। ৃ

আরও পড়ুন