২৪ অক্টোবর ২০২৫

বাড়ি ফিরলেন খালাস পাওয়া ৭ পুলিশ সদস্য

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার»

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ে খালাস পাওয়া সাত পুলিশ সদস্য বাড়ি ফিরেছেন। রায়ের পর সোমবার রাতে কারাগারে মুক্তিনামা পৌছানোর পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কারাগারের সুপার মো. নেছার আহমদ। ছাড়া পেয়ে তারা সোমবার রাতেই নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান।

জেল সুপার মো. নেছার আলম বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

এদের মাঝে কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন চট্টগ্রামের মিরসরাই বড়কমলদহ গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে, এএসআই লিটন মিয়া (৩০) ব্রা²নবাড়িয়ার আখাউড়ার ধর্মনগর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে, সাফানুল করিম (২৫) চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ভূজপুর হাপানিয়া জমিদারপাড়ার মোহাম্মদ ইউছুপের ছেলে, কামাল হোসেন আজাদ (২৭) একই উপজেলার শেখের খীর বাতারবাড়ি গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে, মো. রাজীব হোসেন (২৩)ও বাঁঁশখালীর ইলশার উত্তর বাহারছরা গ্রামের ফয়েজ আহমদের ছেলে, এসআই শাহজাহান আলী (৪৭) জামালপুরের নরন্দি উপজেলার চককল্যাণ গ্রামের মৃত ওসমান আলী সরকার এবং মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০) ঢাকার আশুলিয়ার টাটিবাড়ি গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি এবং রায়ে খালাস পাওয়া সাতজনের আইনজীবী মমতাজ আহমেদ জানান, আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তিনামা ইস্যু করে আদালত। তা কারাগারে পৌছানোর পরই সোমবার রাতেই জেলা কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান। রাতেই তারা নিজ নিজ পরিবারের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন। আদালতের আদেশের মধ্যেই লেখা ছিল মুক্তিনামা পাওয়ার সাথে সাথে যেন তাদের মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এদিকে, মৃত্যুদন্ড পাওয়া বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তারা কোন প্রতিক্রিয়াহীন স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেল সুপার।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কোরবানির আগের রাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর সিনহা পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ১৮ মাস পর সোমবার ৩১ জানুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা হয়। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতের মামলার প্রধান আসামি পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে মৃত্যুদন্ড, অপর ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও বাকি সাত আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।

মৃত্যুদন্ডাপ্ত টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে পৃথকভাবে কনডেম সেলে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বাকি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে স্থানীয় তিনজনকে সাধারণ কয়েদিদের সাথে এবং তিন পুলিশ সদস্যকে পৃথকভাবে রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন জেল সুপার।

জেল সুপার নেছার আলম আরও জানান, মৃত্যুদন্ডাদেশ পেলেও আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত স্বাভাবিক রয়েছেন। তবে তারা চুপচাপ রয়েছে। তাদের নিয়মমতো স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হচ্ছে। তারা আগের নিয়মেই খাবার গ্রহণ করছে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। হত্যাকান্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।

ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন।

এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে মামলার রায় হয়েছে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে।

আরও পড়ুন