খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি »
‘নয়ে না হলে নব্বইয়ে হয় না’ প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যকে হার মানালেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার মো. সিরাজুল ইসলাম। ৫০ বছর বয়সে আলিম (এইচএসসি) পাশ করেছেন। শুধু তিনি নয়, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসি বা সমমান পরীক্ষায় তার সাথে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন নিজের ছেলে, মেয়ে ও মেয়ের ঘরের নাতিও। তারাও পাশ হয়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে দাখিল পাশ করে পারিবারিক কারণে আর পড়ালেখা করতে পারেননি। তবে হাল ছাড়েননি। ৩৪ বছর পর ২০২১ সালে খাগড়াছড়ি ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা থেকে আলিম প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেন পঞ্চাশ বছর বয়সী মো. সিরাজুল ইসলাম। এক চেষ্টায় বাজিমাত করেন। রোববার প্রকাশিত এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর জানতে পারেন ২.১৪ জিপিএ নিয়ে পাশ করেন। শুধু সিরাজুল ইসলাম একা নন, তার সাথে পাশ করেছেন নিজের ছোট মেয়ে, একমাত্র ছেলে ও বড় মেয়ের ঘরের নাতিও।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মানবিক বিভাগ থেকে সিরাজুল ইসলামের ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাজ ৪.১৭ জিপিএ, নাতি মো. নাজমুল হাসান ৪.৬৭ জিপিএ নিয়ে এইচএসসি পাশ করেছেন। এছাড়া একমাত্র ছেলে হাফেজ নেছারুদ্দীন আহমদ চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কামিল মাদ্রাসা থেকে ৪.০০ জিপিএ নিয়ে আলিম পাশ করেছেন।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর বাবা-ছেলে-মেয়ের পাশের খবরে আনন্দের বন্যা বইছে সীমান্তঘেঁষা মাটিরাঙ্গার তাইন্দং আছালং ইসলামপুর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়িতে। প্রতিবেশি ও স্বজনরা অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন বাড়িতে। স্বজনদের কেউ কেউ নিয়ে আসেন ফুল ও মিষ্টি। তাঁর বাড়িতে ভীড় করছেন প্রতিবেশিরা। তাদের সাফল্যে উচ্ছ্বাসিত স্থানীয়রা।
সিরাজুল ইসলামের ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাজ বলেন, ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় যে সাফল্য এনে দিতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত আমার বাবা। আমাদের ভাই-বোনের ফলাফলের চেয়ে বাবার ফলাফলে আমরা গর্বিত।
দীর্ঘ বিরতির পর লেখাপড়ার তাগিদ অনুভব করলেন কেন জানতে চাইলে মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার কোন বয়ষ নেই। ফলাফল ঘোষণার পর ছেলে-মেয়ে আর নাতীর সাথে নিজের কৃতিত্বের খবর পাওয়ার সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখকর মুহুর্ত।
নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাবার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সবাই চাচ্ছে আমি লেখাপড়া অব্যাহত রাখি।
মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ভূইয়া বলেন, ৫০ বছর বয়সে আলীম পাশ করে সিরাজুল ইসলাম বার্তা দিলে শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। তার এ সাফল্যে সমাজের জন্য ইতিবাচক বার্তা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিরাজুল ইসলাম মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি।













