আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
কথায় বলে ‘মাঘের শীতে বাঘে পালায়’। ‘মাঘ’ হাড়কাঁপানো শীতের মাস। চিরায়ত সেই শীত নেমেছে প্রকৃতিতে। সেই শীতের ছোয়া শেষ হতে নাহ হতেই প্রাকৃতি জানান দিচ্ছে— গ্রীষ্মের আগমন ঘটেছে।
মাঘের এই হিম শীতে গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। মুকুলের মোহনীয় ঘ্রাণে জড়োসড়ো শরীরটা যেন আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠে। দূর থেকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়, আম গাছকে যেন মুকুট পড়ানো হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল’। কবির ফাল্গুন না এলেও ভরা শীতেই সুবাস ছড়াচ্ছে আম্রমুকুল।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে চিম্বুক, রোয়াংছড়ি, বাঘমারা, ডুলুপাড়া ও কানা পাড়াসহ সড়কে পাশে ও গ্রামের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বসতবাড়ির আঙ্গিনার আম গাছগুলোতে এমন সুন্দর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

থোকা থোকা মুকুলের ভারে ঝুলে পড়েছে আম গাছের ডালাপালা। আমের মুকুলের ঘ্রাণ বইছে পুরো সবখানে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের ঘ্রাণ। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়েছে ছোট ছোট আম গুটি। গাছে মুকুলের সঙ্গে গুটি আমের দেখাও মিলছে। কুয়াশা কম থাকায় মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফুটিতও হয়েছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এর সুগন্ধ। গ্রামগঞ্জ সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে হলদে রং ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। গাছে গাছে অজস্র মুকুল দেখে খুশি এলাকার মানুষ।
অনেকের ধারণা, আমের মুকুল আসার আগে-পরে যেমন আবহাওয়ার প্রয়োজন, এ বছর তা বিরাজ করছে। ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চ মাসে প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আসার আদর্শ সময়। এ সময়ে মুকুলের প্রধান শত্রু কুয়াশা। এখন পর্যন্ত কুয়াশা কম এবং আকাশে উজ্জ্বল রোদ থাকায় আমের মুকুল সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলা জুড়ে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১৪.৭৪ হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছে। তারমধ্যে ১৪ হাজার ১শত ৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়। কিন্তু চলতি বছর আমের অবাদি-অনবাদি জমিতে কতটুকু ফলন হয়েছে তা জরিপ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষিবিভাগ।
জানা যায়, আমগাছে বর্ষার আগে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে একবার এবং বর্ষার পর আশ্বিন-কার্তিক মাসে আর একবার সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের নিচে যতটুকু স্থানে গাছের ছায়া পড়ে, ততটুকু স্থানের মাটি কুপিয়ে এই সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে। এখনই সময় মুকুলের যত্ন নেওয়ার।

চিম্বুক সড়কে বাগান মালিক লালহাই বম বলেন, আমের মুকুল আসার সাথে সাথে পোকা-মাকড় দমনের জন্য প্রতিটি গাছে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। আগাম ফল আসা গাছগুলিতে মুকুল বের হয়ে গুটি ধরছে। আবহাওয়া যদি ভালো হয় আশা করছি এবারেও ভালো ফলন হবে।
আরেক চাষি লালকিম বম বলেন, পাঁচ একর জায়গা জুড়ে প্রায় ৬-৭ হাজার বিভিন্ন জাতের আম চারা রোপন করেছি। তবে দেশী জাতের আম গাছে মুকুল ধরতে শুরু করেছে। কিন্তু রাংগোয়েই জাতের কিছু কিছু গাছের আম খাওয়ার উপযোগী হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি আর কালবৈশাখী ঝড় হয়নি। এ সময় আমের মুকুল ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো কোন কিছু হলেই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাগান মালিকরা।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রাকৃতিক কারণেই এবার আগেভাগেই আম গাছে মুকুল এসেছে। যে মুকুলে কারণে আমের সৌন্দর্য বেড়েছে। বাগান কিংবা সড়কে থাকা আম গাছ গুলোতে ও মুকুল ধরা কারণে উজ্জ্বল ফুটেছে। এই রকম দৃশ্যই শীত মৌসুম শেষ দিকে দেখা মিলে।
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, আমের প্রকৃত ফলন পেতে হলে অবশ্যই আম গাছে কমপক্ষে দুইবার ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক ও ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। প্রথমবার আমের মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে, দ্বিতীয়বার আমের সাইজ মটরদানার মত হলে। এ ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদান কৃষি বিভাগ পক্ষ হতে অব্যাহত রেখেছে।













