সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার»
ক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এগারো দফায় স্বেচ্ছাগামী আরো এক হাজার ৬৫৪ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে উখিয়া ছেড়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)’র তত্ত্বাবধানে পুলিশী পাহারায় প্রথম পর্বে ১৯টি বাসে উখিয়া কলেজের মাঠ থেকে ভাসানচরের জন্য রওনা হন ১০০৬ রোহিঙ্গা। বিকাল ৫টার দিকে আরো ১৯ বাসে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে উখিয়া ছাড়েন আরো ৬৪৮ জন। সর্বমোট ১৬৫৪ রোহিঙ্গার সাথে এ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ স্কট ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িও রয়েছে।
এর আগে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তার মাধ্যমে উখিয়া কলেজ মাঠে আসেন তারা। অনেকে সোমবার সন্ধ্যায়ও আসেন ট্রানজিট পয়েন্টে। এগারো দফায় দুপুর ও বিকেলে এক হাজার ৬৫৪ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ত্যাগ করেন। এর আগে ৩০ জানুয়ারি দশম দফায় ১২৮৮ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে যান বলে জানান ১৪-এপিবিএন কমান্ডার (এসপি) নাইমুল হক নাইম।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. সামছুদ্দৌজা নয়ন জানান, এগারো দফায় ১৬৫৪ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। পূর্বের নিয়মে তারা বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর জেটিঘাট এলাকায় অবস্থান করবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের তাদের ভাসানচর পৌঁছার কথা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি দশম দফায় ১২৮৮ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে যান।
এদিকে, গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ দফায় ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে সরকার ভাসানচরে পাঠায়। এছাড়া ২০২০ সালের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
এদিকে বিষয়ে ৮-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন জানান, এবারে ভাসানচরে যেতে রাজি হওয়া ১৬৫৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়েন । তারা দুপুর ও বিকেলে পৃথক ৩৮ বাসে যাত্রা করেন। সন্ধ্যা ও রাতে তারা পতেঙ্গাস্থ নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট এলাকায় পৌঁছানোর কথা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। রোহিঙ্গাদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ইতোমধ্যে ২২ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।












