সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার»
করোনার সংক্রমণ হার কমায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে ফের পর্যটকের পদচারণা বেড়েছে। শুক্র-শনিবার সপ্তাহিক ছুটি, রবিবার খোলা আবার সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (মহান একুশে ফেব্রুয়ারি)। রবিবার ছুটি নিয়ে চারদিনের অবকাশ কাটাতে কক্সবাজার এসেছেন নানান পেশাজীবী বিপুল পর্যটক। বিকেলের সৈকত লোকে-লোকারণ্য হয়েছে। আনন্দ, উচ্ছ্বাসে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানার নিয়মও ভুলেছেন অনেকে। তবে উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের সান্নিধ্য নিতে সতর্ক থাকতে বার বার পরামর্শ দিচ্ছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং করছে টুরিস্ট পুলিশ, এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান।
প্রকৃতিতে চলছে বসন্তকাল। রাতে ঠান্ডা পড়লেও দিনের বেলা উষ্ণতা বেড়েছে। পাল্টাচ্ছে সমুদ্রের রূপও। শীতল সাগর এখন ঢেউয়ে উত্তাল। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে গত দু’মাস সৈকত নগরী কক্সবাজারে কমেযায় পর্যটক আগমন। গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণ কম থাকায় সৈকতে ফের বেড়েছে পর্যটক। শুক্রবার দুপুর থেকে সাগরতীরে বেড়েছে পর্যটকের পদচারণা।
লক্ষীপুরের রায়পুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি রায়হান উদ্দিন ও ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, থার্টিফাস্ট নাইট কক্সবাজারে কাটানোর কথা ছিলো। কিন্তু তখন দেশে আবারো করোনার প্রাদূর্ভাব বাড়ন্ত থাকায় আসা বাতিল হয়। এখন একটু কমের দিকে থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি পেয়ে পরিবারসহ ঘুরতে চলে এলাম। অবশ্য শুধু রবিবারটিই ছুটি নিতে হয়েছে। এসে দেখলাম আমাদের মতো অনেক মানুষ এসেছেন। বেশ ভালো লাগছে।

কক্সবাজারে কর্মরত এক সরকারি কর্মজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঝখানে একদিন ছাড়া তিনদিনের ছুটি পেয়ে মাঝের একদিন মিলিয়ে চারদিনের জন্য নরসিংদী সদর থেকে বেড়াতে এসেছেন পরিবার পরিজনসহ তার সহকর্মী। এসেই শুক্রবার বিকেলে সকলে বিচে যান। সন্ধ্যার পর হোটেলে ফেরার পথে সুগন্ধা পয়েন্ট রাস্তায় পর্যটকের ভিড়ে মোবাইল, মানি ব্যাগ সব খোয়া গেছে। টাকার চেয়ে মানি ব্যাগে পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং মোবাইলে তোলা স্মৃতিগুলোর জন্যই তারা কষ্ট অনুভব করছেন বেশি। বিচে নেমে যে আনন্দ করেছে তারা তা বিষাদে হতাশায় রূপ নিয়েছে।
সাতকানিয়া থেকে আসা পর্যটক রমজান মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে জেনেছি, পর্যটক না থাকলে মুখ কালো করে বসে থাকে সৈকতের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পর্যটক একটু বাড়লেই বেপরোয়া ভাবে দাম বাড়িয়ে ক্ষতিপোষানোর চেষ্টায় নির্লজ্জ ভাবে সবকিছুতে দাম বাড়ায়। বাসটার্মিনাল নেমে সৈকত পৌছানো এবং এখানে এটা-ওটা কিনতে গিয়ে সেটা টের পাচ্ছি।
সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ঋতু পরিবর্তন হয়েছে; বেড়েছে সমুদ্রের ঢেউ। উত্তাল সাগরে নিয়ম মেনে গোসলে নামতে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যেখানে পতাকা রয়েছে এবং লাইফ গার্ডকর্মীরা অবস্থান করছেন সেখানে গোসল করলে নিরাপদ।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের রাতযাপনের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। টানা কয়েকদিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে ফের বেড়েছে পর্যটক আনাগোনা। প্রায় হোটেল-গেস্ট হাউজ ও কটেজে পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। যা হতাশাগ্রস্ত পর্যটন ব্যবসায়ীদের আবারো স্বস্তি দিচ্ছে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ২১ ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে এবং সপ্তাহিক মিলিয়ে টানা কয়েকদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে আবারো পর্যটক সমাগম বেড়েছে। সৈকত ও পর্যটন স্পটে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। এরপরও কোথাও কেউ অনাকাঙ্খিত ক্ষতির শিকার হলে পুলিশ বক্স, তথ্য কেন্দ্র বা টুরিস্ট পুলিশ ভবনে এসে জানানোর অনুরোধ করেন টুরিস্ট পুলিশের এসপি।













