২৫ অক্টোবর ২০২৫

পাহাড়ে বাড়ছে কফি চাষ, সফলতার ছোঁয়া

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পর্যটন খাত যেমন বাড়েছে ঠিক তেমনি কৃষির দিক দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন চাষ। পাহাড়ের পাদদেশে এবার হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম চাষ কফি। পাহাড়ের পাদদেশে আবহাওয়া অনুকুলে থাকা আর মাটি উর্বরতায় কফি চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকছেন কফি চাষে, পাচ্ছেন সফলতাও।

চাষিরা জানান, বান্দরবানে অ্যারাবিক নামে কফি চাষ হচ্ছে। এসব কফির খোসাসহ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। একটি গাছে বছরে ২ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ কেজি পর্যন্ত কফি ফল পাওয়া যায়। একবার ফলন দেয়া শুরু করলে একটানা ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায়।

ম্রোলং পাড়া সফলতা কফি চাষী পারিং ম্রো বলেন, ‘এক একরজুড়ে ২৫০টি কফি চারা গাছ লাগিয়েছি। সেই গাছ থেকে এই বছরে ২০ কেজি মতন কফি পেয়েছি। তবে দামের তুলনা তেমন পায়নি। প্রতি কেজি দেড়শত টাকা পেয়েছি। গত বছর ১৮০ মত করে পেতাম প্রতি কেজি। তবে এই বছরে ভালো ফলন হওয়াতে লাভবান হয়েছি।’

আরেক চাষী মিনু ম্রো বলেন, ‘৩০ শতক জায়গাজুড়ে কফি চারা লাগিয়েছি। ২ বার ছিড়ে ৫ কেজি পেয়েছি। লাভ মোটামোটি পেয়েছি। তবে গাছে দুই একটা পাকলে ছিড়ে জমা করে রাখতে হয়।’

এদিকে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গেল বছর বান্দরবানে ১৩৮ হেক্টর জমিতে কফির আবাদ হয়েছিল আর উৎপাদন হয়েছিল ২৬ মেট্রিক টন। আর এ বছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ম্রোলং পাড়া, রোয়াংছড়ি, চিম্বুকসহ জেলা বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কফি চাষের। এতে কৃষি কাজের কফি চাষের জড়িত হয়েছেন প্রায় ছয়শ চাষী। তেমন কোন কষ্ট না হওয়ার কারণে নিমিষের বাড়ি কিনারে ও আম বাগানের গাছের তলে কফি গাছ রোপন করেছেন চাষিরা। তবে চারাটি লাগানো জন্য পূর্ব ও উওর দিকে এমনকি রোদ কিংবা ছায়াই মধ্যবর্তী হলে কফি চাষে বেশ উপযোগী বলে জানান চাষিরা।

জানা যায়, কফি চারা লাগানো হয় জুন হতে জুলাই মাসের দিকে। বর্ষাকালে চারা গোড়া থেকে পলি খুলে ১ ফুটের মতন গর্ত করে সারিবদ্ধভাবে রোপন করা হয় আম বাগানের মধ্যস্থানে ও বাড়ি চারিপাশ আঙ্গিনায়। চারা রোপন শেষে তেমন কোন পরিচর্যায় করতে হয় না। বরং গাছ বেড়ে গেলে জৈব সার দিয়ে দিলে গাছগুলো পরিচর্যার মাধ্যমে ফলন ধরতে শুরু হয় অক্টোবর দিকে। নভেম্বর থেকে শুরু হয় কফি ছিড়ানো। প্রতি গাছ থেকে দেড় কেজি মতন ফলন পাওয়া যায়।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, আবহাওয়া জলবায়ু মাটি ভালো হওয়ায় এখানকার বেশিরভাগ জায়গাই কফি চাষের উপযোগী। পাহাড়ে এখন কফি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার কফি চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন প্রায় ছয়শ’ চাষি। আর কৃষকদের আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগও তাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

আরও পড়ুন