সম্পাদকীয় »
আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে এবং গ্রেফতারের পূর্বক্ষণে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক প্রতিরোধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জাতির প্রতি আহ্বান জানান।
মুক্তাঞ্চলে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় ১৭ এপ্রিল, সমগ্র বাংলাদেশকে ৯টি সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদান, ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও নির্যাতন, ১ কোটি শরণার্থীর দুর্দশা, স্বদেশে অবরুদ্ধ কোটি কোটি মানুষের দুঃসহ জীবনযাপন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসমসাহসিক বীরত্ব ও তাদের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ জীবন উৎসর্গের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, ‘রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনা ফুটন্ত সকাল’।
স্বাধীনতার জন্য মহাজাগরণের যে ক্যানভাস অঙ্কিত হয়েছে তার রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাঁর ধারাবাহিক নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের বিজয়, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিসনদ ৬দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের মতো একের পর এক কালজয়ী সংগ্রামের অধ্যায় রচিত হয়েছে। আর সব ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিলো পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম, সশস্ত্র ও গেরিলা যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণের নির্দেশনা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের বহুবিধ অর্জন আছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি আছে। বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরো অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান। মানুষের গড় আয়ু গড় আয় বেড়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বিনামূল্যে ৮০ শতাংশ দেশবাসীকে টিকা প্রদান একটি বড়ো সাফল্য। তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল অগ্রগতি হয়েছে দেশে। খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, মৎস্য, গবাদি পশু, সবজি, ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসা দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক দেশের কাছে উদাহরণ হয়েছে। স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া নানা চাপ সত্ত্বেও চলমান রয়েছে।
সরকারের এতসব সাফল্য আছে কিন্তু দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মাদকাসক্তি, নারী ও শিশু নির্যাতন নানা ধরণের অপরাধের বিস্তৃতি সামাজিক অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা হয়েছে পড়েছে। আন্তর্জাতকি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও বাজার মনিটরিং মূল্যের যথার্থতা নিরূপণ করে মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। এক কোটি লোককে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি একটি ভাল পদক্ষেপ। মুজিববর্ষে গৃহহীনে গৃহদান কর্মসূচি একটি বড়ো মানবিক কর্মসূচি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের আরো বেশি বিনিয়োগ ও সামাজিক সুরক্ষা বলয় সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের যে অর্থনৈতিক-সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তাকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে জাতির কর্ম প্রচেষ্টা গতিশীল হোক। সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে, অন্যায়, অকল্যাণ, দুর্নীতির অবসান ঘটিয়ে একটি সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার হোক।













