সম্পাদকীয় »
আজ ১ মে, মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সংহতি চেতনা, জীবন-জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেটে কয়েক লক্ষ শ্রমিক জনতা কাজের শ্রমঘণ্টা কমানো, ন্যায্য মজুরি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মদানের মাধ্যমে যে গৌরবগাথা রচনা করেছিলেন তার মহিমা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে চিরকাল অনুপ্রাণিত করে চলেছে তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। মানুষের সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ, ভোগের সামগ্রী, বিপুল নির্মাণযজ্ঞ-এসব শ্রমজীবী আর সাধারণ মানুষের মেধা, শ্রম থেকে উৎসারিত এক কথায় বলা চলে মানব জাতির অগ্রগমনের সচল রথের সারথি তারা।
আমাদের দেশের মানুষ গত ২ বছরে অনেক সংকট পার করে এসেছে। করোনা মহামারিকালে বিপুল মানুষ কাজ চাকরি হারিয়েছেন। গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র কৃষক, কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে নিয়োজিত কর্মজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনি এক পরিবেশে এ আমাদের দেশের মানুষ মে দিবস উদযাপন করবে। করোনা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। কিন্তু শ্রমজীবীদের জীবনে পরিবর্তন আসেনি বরং অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হয়েছে।
শ্রমিকদের বেতন মজুরি বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। শ্রমজীবী মানুষের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সংকুচিত, নারী ও পুরুষের মজুরির ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশের খুবই অভাব। নানা দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমজীবী মারা যাচ্ছেন, প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের বেতন-মজুরি এতই কম যে তাতে জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়ছে করোনাউত্তর এই সময়ে।
প্রবাসী শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপনের কাহিনী প্রতিদিন সংবাদপত্রে আসছে। দেশের গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষ উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত, তাদের মৌলিক অধিকারগুলি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে সামাজিক সুরক্ষা বলয় সম্প্রসারণ, নিয়মিত সাহায্য প্রদান, কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি, শ্রমজীবী মানুষের বেতন-ভাতা নিয়মিত প্রদান, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের সহায়তা-এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকদের ছাঁটাই না করা, নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য হ্রাস, তাদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা, গৃহস্থালী ও কৃষিকাজে তাদের শ্রমের মূল্যায়ন উৎপাদনশীলতার স্বার্থেই প্রয়োজন।
কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, মর্যাদা রক্ষা ও তাদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সমাজ ও রাষ্ট্রকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। মে দিবসের মর্মবাণী আমাদের সংগ্রামে উজ্জীবিত করুক। মে দিবসে আমরা বাংলাদেশ ও বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষদের শুভেচ্ছা ও সংহতি জানাই।