সম্পাদকীয় »
‘সর্বনাশা পদ্মা নদী/তোর কাছে শুধাই/বল আমারে তোর কিরে আর কুলকুনারা নাই/’— আবদুল লতিফ এর কথা আর সুরে কালজয়ী শিল্পী আব্দুল আলীমের কণ্ঠে গাওয়া গানে পদ্মার দুপারের মানুষের নদীর কূল কিনারা না পাওয়ার আর্তি ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদ্মায় বোটে বসে লেখা বিশ্ববিখ্যাত অনেক ছোট গল্পে আর ‘ছিন্নপত্রে’ পদ্মাপারের মানুষের জীবন আলেখ্য এসেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ নতুন করে উদভাসিত হচ্ছে পদ্মা নদীর দুপারের মানুষের জয়োল্লাস।
জাতীয় জীবনের উন্নয়নের মহাকাব্যিক রূপ পদ্মাসেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভালবাসা নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে, কারো কাছে মাথা নত নয়, নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা আর মর্যাদা নিয়ে এই পদ্মা সেতু।
বিশ্বব্যাংক নিজেদের বঞ্চিত করেছে একটি জাতির স্বপ্নের সাথে সংযুক্ত হতে না পারায়, বিভিন্ন দেশের ঢাকার রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের এই সক্ষমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এই সেতু দেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা যোগাবে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের সক্ষমতার প্রতীক এই পদ্মা সেতু, আমাদের এসডিজি লক্ষ্য পূরণ আর ২০৪১ সালের উন্নত বিশ্বের কাতারে স্থান করে নিতে পদ্মা সেতু বড়ো অবদান রাখবে। শুধু তাই নয়, যে সকল মেগাপ্রকল্প চলমান রয়েছে, সে সবের পরিপূর্ণ আর সক্ষম বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে অর্থনীতি আর সমাজ প্রগতির সড়কে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
পদ্মা সেতুর দু পারে আজ উৎসবের বন্যা। নদীর দুপারের মানুষের আনন্দ উচ্ছ্বাস সমগ্র দেশকে স্পর্শ করেছে অমিত প্রাণবন্যায়। সাম্প্রতিক বন্যা দেশের অনেক মানুষের দুঃখ দুর্দশার কারণ হয়েছে কিন্তু দুর্যোগ আর জীবনের গ্লানিÑকষ্টকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবার জেগে উঠেছে দুর্মর প্রাণবন্যায়। কোটি প্রাণের এই জলতরঙ্গ রুধিবে কে— পদ্মা সেতুর উদ্বোধন লক্ষ অযুত মানুষের প্রাণ বন্যাকে ফিরিয়ে আনলো।
পদ্মা সেতুর সফল সমাপ্তি আমাদের দেশের প্রকৌশলী আর কর্মীদের কর্মকুশলতা আর অভিজ্ঞতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘আমরা পারি’Ñএটি তাঁরা প্রমাণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, রাজধানী ও বড় বড় নগরের ওপর অভিবাসন চাপ কমাতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। পদ্মায় ওপারে মানুষের জীবন, সামাজিক প্রগতি, সাংস্কৃতিক প্রাণপ্রবাহ সব কিছুতে আমাদের নব অর্থনীতি, সমাজ ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের প্রতীক হবে পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সরকার, রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে আত্মিক ও মানবিক বন্ধন রচিত হলো যা দেশ ও মানুষকে সোনালী ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবো। জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কাজে পদ্মা সেতু হবে সুবর্ণ মাইলফলক।