বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খালের অবৈধ দখল শতভাগ উচ্ছেদ করাতে এবার সেনাবাহিনী মাঠে নামবে বলে জানান সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী।
শনিবার ( ০৪ মে ) সকালে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকী বলেন, সিডিএর নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সাথে এমওইউ স্বাক্ষরের পর সরকারি আদেশ জারি হয়।
এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেড কাজ শুরু করে। খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা (সেনাবাহিনী) জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে জোরেশোরে উচ্ছেদে নামব। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় কাউন্সিলর সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি জানান, এই প্রকল্পের অধীনে গতবছর খাল থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ঘনফুট ও চলতি বছরে ৪২ লাখ ঘনফুট বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে থাকা ৩৬টি খালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৩টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে বাকি খালগুলো পরিষ্কার ও পুনঃখনন করা হবে।
প্রাথমিকভাবে যেই সব খাল পরিষ্কার করা হয়েছে সচেতনতার অভাবে সেই সব খাল আবারও বর্জ্যে ভরে গেছে। ড্রেন ও খাল অপরিষ্কার থাকার কারণে বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশন হয় না। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, অনেক খাল থেকে ময়লা অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও খালগুলো ময়লায় ভরাট হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা জরুরি। এজন্য স্থানীয়ভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একাধিক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় জন প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’ প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করে সেনাবাহিনী দায়িত্ব ছাড়বে উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী বলেন, শতভাগ কাজ সম্পন্ন করে সেনাবাহিনী দায়িত্ব শেষ করবে।
খাল পরিষ্কার ও পুনঃখননের পাশাপাশি নগরে যাতে জোয়ারের পানি প্রবেশ না করে, সেই লক্ষে সেনাবাহিনী ৫টি, ১২টি সিডিএ এবং ২৩টি পানি উন্নয়ন বোর্ড টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণ করছে। এসব রেগুলেটর নির্মাণকাজ একসঙ্গে শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ যত কমানো যায়, সেই লক্ষে গত ২৩, ২৮, ২৯ এপ্রিল ও ০২ মে আমরা চসিক, সিডিএ, চসিকের ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠক করেছি। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য নগরীর ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা জমা দিতে কাউন্সিলরদের বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমন্বয়ের মাধ্যমে খাল থেকে ইউটিলিটি সার্ভিস সরাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানানো হয়েছে।
এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল আবু সাদাত মোহাম্মদ তানভীর চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের নানা বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে, কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান, চট্টগ্রাম ওয়াসার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রানা চৌধুরী, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মীর মাহমুদ হাসান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল প্রমুখ ।
উল্লেখ্য, বন্দরনগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিডিএর নেওয়া চট্টগ্রামের এই বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি