দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী »
বাঁশ কিনে ঘরে লাই ঝুড়ি তৈরি করেই সংসার চলে বৃদ্ধ টুন্টুর। ৫০ বছর ধরে করছেন এ কাজ। লাই বিক্রি করে যা আয় হয়, তাতে সংসার এখন চলে না। চাল জুটলে, তরকারি জুটে না। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর সারোয়াতলী গ্রামে বাপের বাড়ির পাশেই তার ঝুপড়ি ঘরের আঙ্গিনায় এ কাজ করতে দেখা যায় সত্তরোর্ধ বয়সী টুন্টু দে কে ।
টুন্টু দে জানান, তার বিয়ে হয়েছিল পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে। স্বামীর নাম মানিক দে। তাদের সংসারে শিল্পী নামের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। স্বামীর সংসার বেশিদিন টিকেনি। ছাড়াছাড়ি হয়েছিল হয়ে যায়। একমাত্র মেয়ে শিল্পীকে নিয়ে চলে আসেন বাপের বাড়িতে। এরপর শুরু করেন বাবার থেকে দেখে লাই তৈরির কাজ। টুন্টুর মেয়েটিকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে ছিলেন। তাকে ধার দেনা করে বিয়েও দিয়েছিলেন। এক ছেলে সন্তানও রয়েছে শিল্পীর। নাম প্লাবন। দুর্ভাগ্য শিল্পীর সংসারও টিকেনি মায়ের মতো। বিয়ের কয়েকদিন পর শিল্পী তার ছেলে প্লাবনকে নিয়ে ফিরে আসে মায়ের ঘরে। প্লাবন এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। টুন্টু ও শিল্পী দুইজনই তৈরি করেন লাই।
সপ্তাহের প্রতি বুধবার পাইকাররা এসে তৈরি করা লাই নিয়ে যায়। বর্তমানে একটি বাঁশের দাম ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ কেজি ধারণ ক্ষমতার ৮টি লাই তৈরি করা যায়। প্রতিটি লাই পাইকাররা ১০০ টাকায় কিনে নেয়। সেই হিসেবে সপ্তাহে ৮০০ টাকা আয় হয় টুন্টুর। বাঁশের দাম বাদ দিলে হাতে থাকে ৫০০ টাকা। এ দিয়ে মা, মেয়ে ও নাতির সংসার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টুন্টু দে ঘরের বাইরে লাই তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছোট নড়বড়ে ঘরটি কোনো রকমে টিকে আছে। ঘরের অন্যান্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে লাই তৈরি করছেন। কখনো মাপ দিয়ে বাঁশ কাটেন, কখনো বাঁশের ফালি ছাঁচেন, কখনো লাই বুনেন।
টুন্টু দে বলেন, বাবার বাড়িতে থাকতে থাকতে সড়কের ধারে দুই শতক জায়গা কিনেছিলাম ঋণ নিয়ে। সেই ঋণ শোধ করেছি লাই বিক্রির টাকায়। বয়স হয়ে গেছে এখন আর পারছি না। মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে বড় দুঃশ্চিন্তায় আছি। সরকার বয়স্ক ভাতা দেয়। মোবাইলে তিন মাসে ১৫০০ টাকা করে পাই। সেই ভাতা আর মাসে মা-মেয়ের তৈরি লাই বিক্রির দুই হাজার টাকায় তিনজনের সংসার চলে না। নাতিটি দশম শ্রেণিতে পড়ে। খেয়ে না খেয়ে সে পড়ছে।
টুন্টুদের বাড়ির আরো চারটি পরিবার তৈরি করেন লাই। এ লাই বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার। এ বাড়ির লাই কারিগর ঝুনু দে, কনক দে, সুজিত দে বলেন, বংশপরম্পরায় তারা লাই তৈরির কাজ করে আসছেন। দিনদিন সবকিছুর দাম বাড়ছে। এ কাজ করে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বাঁশ পাওয়া গেলেও বেত পাওয়া যায় না। পুঁজির অভাবে বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারছেন না। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো বলে জানান তারা।