মুফতি আবুল আহসান »
মাহে রমজান হলো প্রভুর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ উপহার। এই মাসে মুমিন-মুসলিমগণ তাদের নেকির পাল্লা ভারী করে নিতে পারেন সহজেই। দান-সদকা করে হাসিল করতে পারেন পাহাড়সম সওয়াব। ভরিয়ে তুলতে পারেন নিজ আমলনামা। রহমতের এই মাসে দান-সদকা হলো একটি বিশেষ আমল। দরিদ্র, সহায়সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় পবিত্র এই মাস।
আমাদের প্রিয় নবী, মানবকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল। তার পরও অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে তিনি দান-সদকা বাড়িয়ে দিতেন।
উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, রমজানে যখন নিয়মিত হজরত জিবরাইল (আ) আসা শুরু করতেন, তখন নবীজির (স) দানশীলতা অনেকগুণ বেড়ে যেত। (বোখারি)। দানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাকো, আমিও তোমাকে দান করব। (বোখারি ও মুসলিম)।
দ্বীন এমন এক ব্যবস্থাপনা, যা সমাজের প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য অধিকারকে নিশ্চিত করে। সকলের মাঝে সকল, এই মর্মবাণীই প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলাম। আল্লাহতায়ালা কালামে পাকে এরশাদ করেন, ‘আর তাদের (ধনীদের) অর্থসম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা আল জারিআত)। আপনি ধনবান, এই রমজানে ভালো ভালো খাবার দিয়ে নিয়মিত সেহরি করছেন, ইফতার করছেন। কখনো কি ভাবছেন, ওই যে রিকশাচালক বা দিনমজুর রোজাদার, তিনি কী খাচ্ছেন সেহরি বা ইফতারে? তার ভাতের থালায় কোনোদিন কি তুলে দিতে পারছেন একটু মাছের ঝোল, দুই টুকরো মাংস? না।
আপনার এই ভাবনা নেই। কিন্তু এই ভাবনা আসতে হবে। নিজেকে নিয়ে আর কত মশগুল থাকবেন! একদিন সব ব্যস্ততা কেটে যাবে। তার পর সেদিন, সেই হাশরের দিন, কে আপনি আর কে সে, তার তফাত থাকবে না। মানুষের জন্য মনে যদি দয়া না থাকে, মায়া না থাকে, কী হবে ওই মন দিয়ে! রমজান এসেছে আপনাকে এ কথাও বলতে, ওহে পানাহার বর্জনকারী, অনুভব কর ক্ষুধার জ্বালা; চেয়ে দেখ গরিবের দিকে; ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করো তার না খেতে পাওয়ার বেদনাকে।
তবে দান করে এটা ভেবে গর্বিত হওয়ার কিছু নেই যে আমি দান করেছি! আমি কত মহান! কত শ্রেষ্ঠ! প্রচার নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ইসলামের নির্দেশনা, ডান হাতে দান করলে বাম হাতও যেন না জানে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা স্বীয় ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোনো শঙ্কা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা আল বাকারা)।
রমজানে দান করলে পাওয়া যায় বাড়তি সওয়াব। এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা সব আমলের প্রতিদান দেন অনেকগুণ বেশি। এ ছাড়া দান করার মধ্য দিয়ে নিজের আত্মিক উন্নতিও ঘটে। হৃদয় বড় হয়, প্রসারিত হয়। আর আপনার দানের কল্যাণ দেখতে পাবেন আপনার পরিবারের মাঝেও। তারা উদার হওয়ার শিক্ষা লাভ করবে। দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে উদ্বুদ্ধ হবে। অতএব দান করুন সমাজের গরিব-দুস্থদের, অসহায়-আশ্রয়হীনকে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদের যে রুজি দিয়েছি, সেদিন আসার আগেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যেদিন না আছে কোনো বেচাকেনা, না আছে কোনো সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব…’। (সুরা আল বাকারা)।
রোজা-সংক্রান্ত মাসআলা অজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলেও রোজা ভেঙে যাবে। ফলে রোজা অবস্থায় অজু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি না করা উচিত।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/বি