দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী »
অন্ধ বাবার পথের ‘সারথি’ সীমা আকতার। তবে রথ নেই। পায়ে হেঁটে অন্ধ বাবাকে নিয়ে পাড়া-গাঁ ঘুরে বিক্রি করেন ঝাড়ু ফুল। সীমার বয়স ১০ বছর। বাড়ির পাশের স্থানীয় একটি মাদ্রারাসায় সে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। জীবিকার তাগিদে বাবাকে ফেরি করতে অজানা অচেনা পথে ছুটে চলছে সে। শেষ গন্তব্য কোথায় তারা জানে না। শুধু কি তাই! টাকা লেনদেনে বাবাকে সহযোগিতা করে সে। সীমাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রামে।
গত ১৬ জানুয়ারি (সোমবার) দুপুরে উত্তর সারোয়াতলী এলাকায় ঝাড়ু ফুল বিক্রির সময় কথা হয় সীমার সাথে। সীমা জানায়, বাবার সাথে ঘুরতে ভালোই লাগে। বাড়িতে তার এক ছোট বোন আছে। বোনটি মায়ের সাথেই থাকে। বাবার হাত ধরে পথ দেখিয়ে পাড়ায় পাড়ায় নিয়ে যায় সীমা। বিক্রি শেষে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাবাকে।
সীমার বাবা মো. হারুনুর রশিদ মানিক বলেন, ‘এক সময় পাহাড়ে বাঁশ-কাঠ কাটতাম। মাটির কাটার কাজ করেছি। চালিয়ে ছিলাম রিকশা। দিনমজুরি করে ভালো ছিলাম পরিবার নিয়ে। হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করি। এর এক পর্যায়ে ২০০৮ সাল থেকে আর দেখতে পাচ্ছি না দুই চোখে।’
তিনি জানান, তারা ৫ ভাই-বোন। এর মধ্যে তিনিসহ ২ ছেলে ও ১ মেয়ে অন্ধ। তার পৈত্রিক সম্পত্তি এক চাচার কাছে বিক্রি করে দিয়ে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর একই এলাকার গুচ্ছগ্রামে ঘর বাঁধেন। অন্ধত্বের কারণে বোনটির বিয়ে হয়নি।
সীমাকে সাথে নিয়ে ফেরি করতে খুব খারাপ লাগে জানিয়ে মানিক বলেন, ‘মেয়েটি মাইলের পর মাইল হাঁটে আমার সাথে। এতে খুবই কষ্ট হয়। ভালো একটা জামা কিনে দিতে পারি না। ভালো খাওয়াতে পারি না।’
মানিক জানান, সামী করলডেঙ্গা তালুকদার পাড়ার তৈয়বীয়া মাদ্রাসায় পড়ে। চার মেয়ের মধ্যে সীমা তৃতীয়। বড় মেয়ে রুমার বিয়ে হয়েছে। অভাবের কারণে সীমার যমজ বোনকে ছোটবেলায় তার ফুফুর কাছে দত্তক দিয়ে দিয়েছি।
সংসার স্বচ্ছল রাখতে সীমার মা পাহাড়ে কাঠ কুড়িয়ে বিক্রি করে, মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। আর মানিক ঝাড় ফুল ও লেবু কিনে ফেরি করেন। এতে দৈনিক ৩-৪শ টাকা আয় হয়। নিজের অন্ধত্বকে পুঁজি করে ভিক্ষে করতে আত্মসম্মানে বাধে বলে জানান তিনি। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ডাক্তার দেখাতে পারেনি। কেউ জানে না তাদের শেষ গন্তব্য কোথায়।