বাংলাধারা প্রতিবেদন »
জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৮৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বহু শ্রমিক। মুধুমাত্র ২০১৯ সালের প্রথম সাড়ে চার মাসে নিহত হয়েছে ৬ ও আহত হয়েছে আরো ১৬ জনের অধিক শ্রমিক।
রোববার (১৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম নামের এক সংগঠনের আয়োজনে এক মাববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ তথ্য জানিয়ে জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পে এ মৃত্যুর মিছিল থামানোর দাবি জানানো হয়েছে।
জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জাতীয়াতাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, বি এম এফ এর চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি কাজী আলতাফ, জাতীয়াতাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক শেখ নূরুল্লাহ বাহার, আব্দুর রহিম মাষ্টার, মোহাম্মদ আলী,পাহাড়ি ভট্টচার্য এবং ফজলুল কবির মিন্টু প্রমূখ।
এসময় বক্তারা বলেন, মালিক পক্ষ মুনাফা ছাড়া আর কিছুই বুঝেনা। ফলে শ্রমিকেরা বারবার মালিকের অতি মুনাফার বলি হচ্ছে। বছরের পর বছর কর্মক্ষেত্র অনিরাপদ থাকার কারনে শ্রমিকের মৃত্যুকে কোনভাবেই নিছক দূর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নাই বরং একে শ্রমিক হত্যা হিসাবেই বিবেচনা করতে হবে।
বুধবার (১৫ মে) সিতাকুন্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড প্রিমিয়াম ট্রেড কর্পোরেশনে অগ্নি দূর্ঘটনায় রুবেল এবং হামিদুল নামে জন শ্রমিক নিহত ও ৫ জন শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হয়। বক্তারা প্রিমিয়াম ট্রেড কর্পোরেশনে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করার দাবী জানানোর পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারবর্গের প্রত্যেককে লস অফ ইয়ার আর্ণিংস এর ভিত্তিতে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন প্রদানের দাবী জানান।
বক্তারা বলেন দূর্বল, নিপীড়িত ও অসহায় জনগোষ্ঠির প্রতি রাষ্ট্রেরও যেন কোন দায়িত্ব নেই। জীবন বাঁচাতে রুটি রুজির জন্য কাজ করতে এসে শ্রমিকের জীবনই যদি হুমকীর মধ্যে পড়ে যায় তাহলে তা কখনোই শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য সুখকর হতে পারেনা বরং পুরো শিল্পই হুমকীর মধ্যে রয়েছে বলা যায়।
বক্তারা আরো বলেন, নিরাপত্তার জন্য হুমকী হতে পারে এমন কারন সমূহ অবিলম্বে চিহ্নিত করে দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করার নীতি গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি যেমন হেলম্যাট, মেটাল হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, গাম বুট, আই প্রটেকশন গ্লাস, ইয়ার প্লাগ, ফায়ার জ্যাকেট ইত্যাদি সরবরাহ করা আবশ্যক।কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তদারকি জোরদার করা সহ কোন ইয়ার্ডে দূর্ঘটনা ঘটলে তার জন্য যদি মালিক পক্ষের অবহেলা বা উদাসীনতা প্রমানিত হয় তাহলে আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কেবল এ শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, জীবন ধারনের জন্য ন্যূনতম মজুরিও তারা পাচ্ছেনা। সরকার জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১৬০০০ টাকা ঘোষণা করলেও কিন্তু অদ্যবধি কোন মালিক শ্রমিকদেরকে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি দিচ্ছেনা।
তারা অবিলম্বে শ্রমিদের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০০ টাকা বাস্তবায়ন এবং ঈদুল ফিতরের কমপক্ষে ১০ দিন পূর্বে ঈদ বোনাস প্রদানেরও দাবী জানান।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর