spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদমতামতযে কারণে মুসলিম লীগের বিরোধীতা করতেন মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী

যে কারণে মুসলিম লীগের বিরোধীতা করতেন মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী

spot_img

আকাশ ইকবাল »

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তাঁর সময়ের খুব কম মুসলিম ব্যক্তি রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পেরেছেন। রাজনীতিতে তিনি অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হিন্দু-মুসলমানের মিলিত সংগ্রামে ভারতের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন। এজন্য তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধীতা করেন এবং যোগ দেন কংগ্রেস এবং পরবর্তীতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজে। অসাম্প্রদায়িক গণমুখী চেতনায় বিশ্বাসী এই নেতা অসহযোগ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, স্বরাজ ও ইসলাম মিশনের কাজ এক সঙ্গে চালিয়ে গেছেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বাংলার জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়লে, স্যার সলিমুল্লাহ উপলদ্ধি করেন মুসলমানের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠন দরকার। এই চিন্তা থেকে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সলিমুল্লাহ ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অল ইন্ডিয়া মুসলিম অ্যাডুকেশন কনফারেন্স আহ্বান করেন। এই সম্মেলনে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি ছিলেণ তিনি নিজে এবং যুগ্ম সচিব ছিলেন নবাব ভিকারুল মুলক এবং এ কে ফজলুল হক। এই কনফারেন্সেই সলিমুল্লাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন এবং সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

এই সম্মেলনে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি সমর্থন জানাননি। কারণ, মুসলিম সমাজের তৎকালীন ধনী ও জমিদারদের নিয়েই মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুসলিম লীগের নীতিতে সাধারণ মানুষের মুক্তি ও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো বিষয় উল্লেখ ছিল না।

১৯০৬ থেকে ১৫ পর্যন্ত মুসলিম লীগের সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না। ১৯১৬ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ লক্ষ্নৌ প্যাক্ট সম্পাদন করার মাধ্যমে কিছুটা জনপ্রিয়তা বাড়ে। ১৯২০ সালে কংগ্রেসের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে মুসলিম লীগও সমর্থন জানায়। পরে ১৯২৯ সালে ইসলামাবাদীকে মুসলিম লীগের চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। ন্তিু পরের বছর ১৯৩০ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।

প্রথম কারণ, মুসলিম লীগের নেতারা মনে করত মুসলিম জাতীর স্বার্থ রক্ষা করতে একমাত্র মুসলিম লীগই পারে। এছাড়া, জাতীয়তাবাদী মুসলমানরা তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয় কারণ, কৃষক প্রজা সমিতি। কৃষক প্রজা সমিতি প্রধানত সমাজের দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করত। অন্যদিকে, মুসলিম লীগ সমাজের জমিদার ও ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করত। এছাড়া মুসলিম লীগ তৎকালীন কমিউনিস্ট রাজনৈতিক দলসমূহ ও কংগ্রেসের সমর্থক এবং সহযোগী সংগঠন জমিয়তে ওলামা হিন্দ প্রভৃতি রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধীতা করত।

প্রখ্যাত সাংবাদিক মৌলানা আকরাম খাঁ ছিলেন ইসলামাবাদীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী ও বন্ধু। ১৯৩৬ সালে আকরাম খাঁ কৃষক প্রজা দল ত্যাগ করে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যোগ দান করায় ইসলামাবাদী তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্কের অবসান ঘটান।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হলে ইসলামাবাদী এর বিরোধীতা করেন। কারণ, তিনি চায়নি ধর্মের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র আবাসভূমি হোক। তিনি সব সময় চেয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি। তিনি স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা ছিল ভারতবর্ষের জন্য।

সূত্র : কিংবদন্তি মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী

লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক 

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ