মিজানুর রহমান ইউসুফ »
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ২৮ বছর বয়সী এক যুবক, নগরীর আকবর শাহ থানাধীন নিউ পাঞ্জাবী লাইন এলাকায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই জীবন যাপন করছিল। দোকনের অদুরে ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘরেই পরিবার নিয়ে থাকত সে। মাত্র দুই’শ গজ দূরে তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকও ‘মুক্তিযোদ্ধা স্টোর’ নামে একটি লাকড়ীর দোকান চালান এবং পাশেই একটি কুঁড়ে ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন।
গত ১১ এপ্রিল হাবিবের সুখী জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক দূর্যোগ। দুপুর দেড়টার দিকে পিএসআই মোহাম্মদ আফছার ও এএসআই নাছেরের নেতৃত্বে আকবর শাহ থানার একদল পুলিশ এসে দোকান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় ঘর থেকে দৌড়ে এসে তার স্ত্রী খালেদা কেন তাকে নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে পুলিশ বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে এবং থানায় গিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। ছেলেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে শুনে বয়:বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক দৌড়ে এসে পুলিশকে থামানোর চেষ্টা করলে পুলিশদল তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হাবিবকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায় বলে অভিযোগে জানা যায়।
হাবিবের স্ত্রী খালেদা অভিযোগ করে বলেন, থানায় গেলে পুলিশ আমাদের প্রথমে ভিতরে ঢুকতেই দেয়নি। পরে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। আমি ধার করে দশ হাজার টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় আবার থানায় গেলে পুলিশ জানায় তাকে ছাড়া যাবে না। তাকে না ছাড়ার জন্য অনেকগুলো কল এসেছে। খালেদা বলেন, রাত ১২ টার দিকে পুলিশ আমাদের জানায় হাবিবকে ছোট-খাট মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হবে যাতে পরদিনই তার জামিন করানো যাবে। তবে পরদিন আদালতে গিয়ে জানতে পারি তাকে ১৬০০ পিস ইয়াবাসহ পাহাড়িকা সিএনজি স্টেশনের সামনে থেকে ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা সড়ে ৬টায় আটক করা হয়েছে এমন মামলা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার মাথায় তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা। পুলিশ সবার সামনে থেকে আমার স্বামীকে দুপুর দেড়টার দিকে তার দোকানের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তার পেন্টের পকেট তল্লাশী করে নগদ ৪ হাজার টাকা পায়। তবে তা আমাকে না দিয়ে দারোগা আবছার তার পকেটে করে নিয়ে যায়। পরে থানায় গেলে টাকাগুলো আমাকে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। হাবিবের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক বলেন, ১৩ এপ্রিল থানায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে থানা থেকে বের করে দেয়। যদিও পরে একজন সাংবাদিক মামলার বিষয় জানতে চেয়ে ওসিকে ফোন করলে পুলিশের আচরণে পরিবর্তন আসে।
আব্দুল মালেক বলেন, ওই সাংবাদিকের অনুরোধে ওসি সাহেব একজন অফিসারকে দিয়ে আমার ছেলের বিষয়ে একটি তদন্ত করান। তদন্তে আমার ছেলের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসার কোন অভিযোগ পাননি বলেও জানান ওসি। তবে মামলার বিষয়ে কোন কিছু করতে পারবেন না বলে জানান ওসি।
“আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আর আমার নিরপরাধ ছেলে মাদক পাচারের মিথ্যা মামলায় দেড় মাস ধরে জেল খাটছে। থানা পুলিশ এবং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবকিছু জেনেও আমার নিরপরাধ ছেলেটাকে জেল থেকে ছাড়ানোর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না”, হতাশ কন্ঠে বলেন আব্দুল মালেক।
থানায় কোন প্রতিকার না পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক আকবর শাহ থানার দুই কর্মকর্তা পিএসআই মোহাম্মদ আবছার ও এএসআই নাছেরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান অভিযোগটি তৎক্ষনাত আমলে নিয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) (সাপ্লাই) জয়নুল আবেদিন কে তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
এডিসি জয়নুল আবেদিন বাংলাধারাকে বলেন, অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং আশেপাশের লোকদের সাথে কথা বলেছি। পরে উভয় পক্ষের সাক্ষিদের সাক্ষ্য গ্রহন করেছি। প্রাথমিক তদন্তে আকবর শাহ থানার দুই অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পিএসআই মো. আফছার ও এএসআই নাছেরের বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গে’র অভিযোগ এনে মাননীয় কমিশনার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান বাংলাধারাকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের অভিযোগটি পাওয়ার সাথে সাথেই একজন চৌকস অফিসারকে তদন্তে করতে দেই। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আকবর শাহ থানার দুই অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর