spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩
প্রচ্ছদপার্বত্য অঞ্চলবান্দরবানে কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়ি

বান্দরবানে কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়ি

spot_img

সম্পাদকীয় »

নাম কলাবতী শাড়ি। কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়িটি তৈরি হলো বান্দরবানে। দেশে এটি প্রথম। সেখানকার জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে মৌলভীবাজারের মনিপুরী শাড়ির কারিগর রাধাবতী দেবী ১৫ দিনের চেষ্টায় শাড়িটি বানিয়েছেন। জামদানি নকশায় তৈরি শাড়িটি দেখতে খুবই পছন্দসই।

খরব নিয়ে জানা গেছে, কুটিরশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প আছে। সেখানে কয়েক’শ নারী ও পুরুষকে কলাগাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা তৈরি করেন অফিস ফোল্ডার, ব্যাগ, ঝুড়ি, শতরঞ্জি, কলমদানি, ম্যাট, ঘরের ভেতর পরার জুতা, দোলনাসহ নানা পণ্য সামগ্রী। তারই অংশ হিসেবে কলাগাছের তন্তু দিয়ে তৈরি হলো শাড়ি।

বান্দরবানে কলাগাছ প্রচুর। কলাগাছ মাত্র একবারই ফল দেয়। তারপর সেটি কেটে ফেলে দিতে হয়। তাই এর সুতা দিয়ে শাড়ি বানানোর যে চিন্তা ডিসি ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি করেছেন তা ইতিবাচক। প্রথমে কাপড় বোনা হয়। তবে কাপড়টি অনেক মোটা আর খসখসে হয়। পরে সেটি আরেকটু উন্নত করে শাড়ি বানানোর মতো সুতা তৈরি করা হয়। আর ডিসির অনুরোধে মনিপুরী কারিগর রাধাবতী দেবী শাড়ি তৈরি করেন।

আমাদের দেশে এ ধরনের অনেক উদ্যোগ প্রায়ই নেয়া হয় এবং এতে অনেকেই যথেষ্ট উদ্ভাবনী মেধা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারি মদদের অভাব, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং উৎপাদন ও বিপণনের মতো বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবন বা আবিষ্কারটি আর জনগণের পর্যায়ে যেতে পারে না, তার আগেই এর অপমৃত্যু ঘটে।

পাটের শাড়ি বা অন্যান্য পণ্যের বিষয়টি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়। পাট নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশেই। আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে পাট নিয়ে গবেষণার। সেই প্রতিষ্ঠানে বিশ্বমানের গবেষণা হচ্ছে। তাদের উদ্ভাবনও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে পাটপণ্যের যে বিপুল চাহিদা সেটি আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। শুধু প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যাগের জায়গাটিও যদি পাটের ব্যাগ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় তাহলে বিশ্ববাজারে আমাদের প্রবাসী কর্মীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান তারও চেয়ে বেশি অর্থ আহরণ করা সম্ভব বলে আমাদের ধারণা। প্লাস্টিক ও পলিথিন পরিবেশের জন্য ভয়াবহ রকমের ক্ষতির কারণ। আর সে কারণেই আন্তর্জাতিক বিশ্ব চায় পরিবেশবান্ধব পণ্য। এর চেয়ে অনুকূল বাজার আর কোন পণ্যের ক্ষেত্রে পাওয়া সম্ভব? পাটের শাড়ি এবং আরো যেসব পণ্য পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেগুলো দেখতেও সুদৃশ্য, টেকসই এবং অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী। তার পরও সেগুলোর গণমুখী প্রচলন আমরা করতে পারিনি।

এখন কলার সুতা দিয়ে কাপড় বানানোর বিষয়টিও একইভাবে দেখতে হবে। বান্দরবানের ডিসি মূল কাজটি করে দিয়েছেন। এখন এই সুতা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গবেষণা করতে হবে। সেটি হতে পারে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়। এর উৎপাদন পর্যায়ে যেতে যেসব ধাপ পেরোতে হবে সেজন্য দরকার হবে বড় প্রকল্প হাতে নেয়া। সেটি সরকারকেই নিতে হবে। ইয়াসমিন তিবরীজি জানান, তারা এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তাঁত বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠাচ্ছেন।

আমরা আশা করব, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এ বিষয়ে উদ্যমী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসবে এবং একটি দেশীয় উদ্ভাবনকে জনকল্যাণে কাজে লাগাতে প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবে যা করণীয় সেটি করবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ