সম্পাদকীয় »
নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হলেন মো. সাহাবুদ্দিন। টানা দুই মেয়াদে মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুরো ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর গতকাল সোমবার দায়িত্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন। নয়া রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি।
এমন একসময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন যখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ বেড়েই চলেছে। এ বিরোধের মূলে আছে নির্বাচন ব্যবস্থা। সঙ্গত কারণে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলগুলোর বিরোধ মেটাতে কোনো ধরনের আলোচনা বা সংলাপের উদ্যোগ তিনি নেবেন কি না; বিষয়টি এখন সামনে এসে পড়েছে দেশবাসীর। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কী ধরনের ভূমিকা নেন, সে দিকেও কৌতূহলী দৃষ্টি দেশবাসীর।
তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে সেই দলের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন অন্য দলগুলোর আস্থা কিভাবে অর্জন করবেন নতুন রাষ্ট্রপতি তা-ই এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয়। কারণ বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো এখন পর্যন্ত নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানায়নি; বরং বিএনপি বলে আসছে, যেহেতু এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছে, ফলে সরকার কাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করল, এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
আগামী ৮-৯ মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল নির্দলীয় সরকারব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা বলছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর বিরোধ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ পটভূমিতে নতুন রাষ্ট্রপতি কী ভূমিকা নেন, স্বাভাবিকভাবে সে দিকে নজর থাকবে অংশীজনদের। রাজনৈতিক অঙ্গনে সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে তিনি কী ভূমিকা নেবেন বা নিতে পারেন, তা-ও অনেকের আগ্রহের বিষয়। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবস্থা ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে কোনো উদ্যোগ নতুন রাষ্ট্রপতি নেবেন কি না তা-ই হচ্ছে বড় বিষয়।
সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নামে রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ড চলে। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান; কিন্তু তিনি সরকারপ্রধান নন। দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। শুধু দু’টি স্বাধীন ক্ষমতা রয়েছে। এক. রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে শুধু প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। তবে পরোক্ষ ক্ষমতার বিষয়ও আছে সংবিধানে। রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পেশ করবেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত হলেও তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবকতুল্য এবং এ পদের একটি প্রতীকী মর্যাদা আছে। ফলে দেশের কোনো সঙ্কটে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে ওই সঙ্কট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারেন রাষ্ট্রপতি। সাধারণভাবে এমন একটা ধারণা রয়েছে যে, সীমিত ক্ষমতার মধ্যে নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি দলগুলোর বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করাসহ কিছু ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। সে কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ অব্যাহত থাকায় নির্বাচন এলে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আলোচনায় আসে। এবারো এর ব্যতিক্রম নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কী ভূমিকা রাখবেন সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন দেশবাসী। নতুন রাষ্ট্রপতি যেন দেশের রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসায় কার্যকর একটি পদক্ষেপ নিতে পারেন, সেই প্রত্যাশা সবার।