spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
বুধবার, ৭ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদবৃহত্তর চট্টগ্রামদক্ষিণ চট্রগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য, বৃহস্পতিবারে ভাড়া দ্বিগুণ

দক্ষিণ চট্রগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য, বৃহস্পতিবারে ভাড়া দ্বিগুণ

spot_img

কাউছার আলম,পটিয়া »

নতুন ব্রিজ নাম শুনলেই চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলের যাত্রীদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের ভয়াবহ চিত্র। প্রতি বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার আসলেই আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ে পরিবহন শ্রমিকরা। আর বাসের এমন নৈরাজ্য ঠেকাতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গন বেশ কয়েক বার জেল জরিমানা করে ও থামাতে পারছেনা।

গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক মুখে মাস্ক পড়ে মাথায় ক্যাপ দিয়ে যাত্রীবেশে সচক্ষে নতুন ব্রিজের গনপরিবহনের নৈরাজ্য প্রতক্ষ্য করেন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ছদ্মবেশে বিভিন্ন বাসে অবস্থান করে নৈরাজ্য প্রত্যক্ষ করার পর ১০টি বাসকে মামলা দেন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক। এ সময় ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা এবং ৩টি গাড়িকে আটক করার পাশাপাশি বাসের অনিয়মের বিরুদ্ধে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়।

এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে নতুন ব্রিজ মোড়ে এর আগেও একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। তবে বাসচালকদের হাত থেকে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের হয়রানির শিকার হওয়া বন্ধ করা যায়নি। তাই আজ ভিন্ন কৌশলে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, মুখে মাস্ক পরে বিভিন্ন রুটের বাসের হেলপারের কাছে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে যাওয়ার ভাড়া জানতে চাইলে অধিকাংশ হেলপারই অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। এরপর সাতকানিয়া রুটের একটি বাসের হেলপারের কাছে দোহাজারীর ভাড়া জানতে চাইলে ৮০ টাকা ভাড়া বলেন হেলপার। অথচ নতুন ব্রিজ থেকে দোহাজারীর ভাড়া ৪০ টাকা। এই দ্বিগুণ ভাড়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে আমি আমার পিয়নকে নিয়ে বাসটিতে যাত্রীবেশে উঠি এবং বাসটিতে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে জানতে পারি যে, তাদেরকে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। এরপর বাসটিকে আটক করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় সর্বমোট ১০টি গাড়িকে ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করার পাশাপাশি বাসের অনিয়মের বিরুদ্ধে চালক-হেলপারদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে ইফতারের পর হতে আবারো বাড়তি ভাড়া দিয়ে দক্ষিণ চট্রগ্রামের যাত্রীদের বাড়িতে যেতে দেখা যায়। আনোয়ারার বাস যাত্রী মোকাররম হোসেন বলেন,শুনেছি অফিসে থাকতে নতুন ব্রীজ এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। ভাবলাম আজ স্বস্তিতে বাড়ি যাওয়া যাবে কিন্তু সন্ধ্যা সাত টায় এসে দেখি চিত্র আগের মতোই। বাড়তি বাড়া আর বিড়ম্বনা সয়ে বাসে বসে যেতে হচ্ছে।

পটিয়ায় আরো একাধিক যাত্রী জানান, প্রতিদিন বাড়তি ভাড়া দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেও এদের থামানো যাচ্ছে না। এজন্য স্থাযী ভাবে বিআরটিএর অভিযান পরিচালনা করার জন্য ট্রাফিক বক্সের ন্যায় অভিযান পরিচালনার বক্স স্পথন করা এখন সময়ের দাবী। তখন টের পাওয়া যাবে বাড়তি ভাড়া নৈরাজ্যের আসল হোতা কে বা কারা।

যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয় সবচেয়ে বেশি বৃহস্পতিবার ও রোববার। এ দু’দিন শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার যাত্রীদের দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া দিতে হয়। বৃহস্পতিবার আসলেই শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারা বরকল বরমাগামী বাসগুলো ৫০-৮০টাকা নেয়। পটিয়াগামী যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫-২০ টাকার ভাড়া ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত নেয়। চন্দনাইশের যাত্রীদের ৬০-১০০ টাকা, বাঁশখালীগামী ১০০-১৫০ টাকা, সাতকানিয়াগামী ৮০-১২০ টাকা এবং লোহাগাড়া উপজেলার যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।

বাড়তি ভাড়া আদায় করতে গাড়ির চালকরা রাত ৮টার পর গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও নেয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে পরে চলে যায়। ন্যায্য ভাড়া নিশ্চিত করতে নেয়া হয় না প্রশাসনিক ব্যবস্থা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গাড়ির চালক ও হেলপাররা বাড়তি ভাড়া আদায় করে করে বলে অভিযোগ আছে। আর এতে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে মালিক সমিতির নেতারা।

কথা হয় বাঁশখালী যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ইমাম হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আসলেই যেন সড়ক হরতাল-অবরোধে পরিণত হয়। ভাড়া বেড়ে যায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। বাঁশখালী যেতে লাগে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা। আর বৃহস্পতিবার সময়ের সাথে সাথে বেড়ে যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

রাফাত নামের এক চাকরিজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয় না। শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকে। তাই বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হই। আর গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়া দেখে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। হ্যাঁ, ভাড়া একটু বাড়তে পারে। তাই বলে এমন নয় যে, দ্বিগুণ ছাড়িয়ে ভাড়া নিবে।

ভাড়া বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে শাহ আলম নামে একজন বাস ড্রাইভার জানান, বৃহস্পতিবার, শনিবার, রবিবার মালিককে অন্যান্য দিন থেকে ইনকাম বেশি দিতে হয়। বৃহস্পতিবার মানুষের উপচে পড়া ভীড় থাকে। রাস্তাঘাট জ্যামও থাকে অনেক। স্বাভাবিক ভাড়াতে যাওয়া-আসাতে অন্যান্য দিনের মত টাকা উঠেনা। তাই ভাড়া বাড়িয়ে নিতে হয়। তিনি বলেন, মালিককে ইনকাম কম দিতে হলে আমরাও ভাড়া কম নিতে পারি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ মুসা বলেন, অনেকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আসলে দুর পাল্লার গাড়িগুলো ভাড়া বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মূলত শহরের গাড়িগুলো বেশি ভাড়া নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা এ বিষয়ে নোটিশ দিয়েছি। জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে গাড়ি চালকরা ভাড়া বাড়তি না নেয়। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

চট্টগ্রামর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাশহুদুল কবীরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ভাড়া নৈরাজ্যের কথা আমাদের নজরে আছে। এ বিষয় নিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। তারপরও কোনো ফল দেখছি না। আমরা আগেও মোবাইল কোর্ট চালিয়েছি। বর্তমানেও চালাচ্ছি। আগামীতেও মোবাইল কোর্ট চালিয়ে যাব। আশা রাখি, এ সমস্যা থেকে জনগণকে শীঘ্রই মুক্তির পথ দেখাতে পারব।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ