বাংলাধারা প্রতিবেদক »
পুলিশের খাতায় এরশাদ সিকদার থেকেও ভয়ঙ্কর ও নৃসংশ খুনি অমিত মুহুরী। তার খুন করার স্টাইল যে কোন সুস্থ মানুষের মনে ভীতি ধরিয়ে দিয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের এনায়েতবাজার রানীরদিঘি এলাকা থেকে একটি ড্রাম উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে বোমা রয়েছে ভাবা হলেও ড্রাম কেটে ভেতরে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ গলে যাওয়ায় তখন পরিচয় বের করা যায়নি।
পরে পুলিশ জানতে পারে লাশটি যুবলীগকর্মী ইমরানুল করিমের। তাকে খুন করে লাশ রেখে রাতভর গান শুনেছিলেন অমিত মুহুরী। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে একই বছরের ৩১ আগস্ট ইমাম হোসেন ও শফিকুর রহমান নামের দুজনকে গ্রেফতারের পর রহস্য জানতে পারে পুলিশ। পুলিশের মতে ভয়ঙ্কর নৃসংশ ও ঠান্ডা মাথার খুনি এই অমিত মুহুরী। যুবলীগকর্মী ইমরানুল করিম খুন ছাড়াও ১৫ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অমিত মুহুরীর বিরুদ্ধে। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি ঘনিষ্ঠ বন্ধুও।
বুধবার (২৯ মে) দিনগত রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় খুন হন সেই অমিত। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন, ৩২ নম্বর সেলে রিপন নামের একজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় অমিত মুহুরীর। পরে রিপন ভারী জিনিস’ দিয়ে অমিতকে আঘাত করে। আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যায় অমিত মুহুরী। কারাগার সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে অমিতের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় রিপন নামে আরেক বন্দির। পরে রিপন ইট দিয়ে অমিতকে মাথায় আঘাত করে।
জানা যায়, ২০১২ সালে নারীঘটিত বিষয় নিয়ে অমিত মুহুরীর সঙ্গে মারামারি হয় বন্ধু রাসেলের। পরে প্রতিশোধ নিতে অমিত মুহুরী তার সহযোগীদের নিয়ে রাসেলকে তুলে নিয়ে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি। ২০১৩ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি সাত রাস্তার মোড় এলাকায় অমিতের হাতে খুন হয় শিশু মো. আরমান (৮) ও যুবলীগকর্মী সাজু পালিত (২৫)। চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মামলায় অন্যতম আসামি অমিত মুহুরী।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে কয়েদিদের মধ্যে মারামারিতে নিহত হন অমিত। ৩২ নম্বর সেলে রিপন নামের অপর এক কয়েদির ইটের আঘাতে অমিত গুরুতর আহত হন। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডা. মনোরঞ্জন মুহুরি চেয়ারম্যান বাড়ির অজিত মুহুরীর ছেলে অমিত মুহুরী। নগরের ওমর গণি এমইএস কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও তার গণ্ডি পেরোতে পারে নি।
এদিকে পুলিশের খাতায় অমিত এরশাদ সিকদার থেকেও ভয়ঙ্কর ও নৃসংশ খুনি হিসেবে পরিচিত। গত ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার অমিতকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন নগর গোয়েন্দা পুলিশ ( ডিবি)। তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১৫ টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের পর থেকে কারা অভ্যন্তরে রয়েছেন অমিত।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/বি