spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামকক্সবাজার‘মোখা’ আঘাতের ৩ দিনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারেনি দুর্গতরা

‘মোখা’ আঘাতের ৩ দিনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারেনি দুর্গতরা

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার : অতিপ্রবল ঘুর্ণিঝড়ে দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তরা তিনদিনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারেনি। সৌরপ্যানেল নষ্ট ও লাইনের তার ছিড়ে যাওয়ায় চালু করা যায়নি বিদুৎ সংযোগ। লবণাক্ত পানি প্লাবনের কারণে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিমাংশের বীচ এলাকায় খাবার পানির সংকট শুরু হয়েছে। এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ এসে পৌঁছায়নি দ্বীপে। বিধ্বস্ত বাড়িঘরের বাসিন্দারা খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে মানবেতর সময় কাটাচ্ছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আর কোন সেবা মিলছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ অবস্থার দ্রুত আবসান এবং খাদ্য সংস্থানের দাবি করেছেন দুর্গত মানুষগুলো।

একইভাবে উপজেলার আরেক উপকূলীয় ইউনিয়ন সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপের তিনটি ওয়ার্ডেও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ সেন্টমার্টিনের অবস্থা ভোগছেন। বাতাসের তীব্রতায় তার ছিড়ে গিয়ে বিশটির অধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় তিনদিনেও বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু হয়নি এখানেও। উপড়ে যাওয়া গাছগুলো সরানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন দূর্গতরা। স্থল যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এনজিও সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছে। ফলে এখানে খাদ্য সংকট নিয়ে কারো অভিযোগ নেই। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতায় দমকা বাতাসে টেকনাফের হোয়াইক্যং মিনাবাজার এলাকায় সদ্য তৈরি মুজিববর্ষের বেশ কয়েকটি ঘরও বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো আবার দাঁড় করাতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন দুর্গতরা।

জেলা প্রশাসন বলছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করে সহযোগিতা দেয়া হবে।

তথ্য মতে, গেল ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার অতিক্রম করে মিয়ানমারের সিটওয়ে এলাকায় আঘাত হানে। বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রমকালে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এবং একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে তান্ডব চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় দেড় হাজার পরিবার। কিন্তু তিনদিন অতিবাহিত হলেও পর্যাপ্ত সহযোগিতা দ্বীপে পৌঁছেনি বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও কার্যত কোন কিছু তিনদিনেও হয়নি বলে দাবি তাদের।

তবে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসনে বলেন, মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ত্রিপল দিয়ে কোন রকম আশ্রয় তৈরি করেছে। অনেকে ঘরের উপর ভেঙ্গে পড়া গাছ সরিয়ে নিজেরা ঘুরে দাঁড়ানোর চষ্টা করছেন। এখনো সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ দ্বীপে এসে পৌঁছেনি। তবে শুকনো খাবার দিয়ে অনেক সংস্থা সহযোগিতা করছে।

তিনি আরো বলেন, দ্বীপের বীচ এলাকার পাশের গ্রামগুলোতে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। সরকারি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থাকায় প্রাথমিক সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে দ্বীপবাসিকে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, বিজিবি এবং নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিধ্বস্ত এবং আংশিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে বারো শত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের জন্য ঢেউটিন সরবরাহ করছে জেলা প্রশাসন। আজ-কালের মধ্যে এসব নির্মাণ সামগ্রী সেন্টমার্টিন পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কথা স্বীকার করলেও পানি সংকটের কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান মুজিব।

এদিকে, টেকনাফের আরেক উপকূলীয় ইউনিয়ন সাবরাংয়ের শাহপরীদ্বীপে স্থল যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখনো সরকারি কোন ত্রাণ পৌঁছেনি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো এখানেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবদুল মান্নান বলেন, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে প্রায় দেড় হাজারাধিক ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আরো দেড় হাজারের মতো বাড়িঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঘেরাবেড়া নষ্ট হয়েছে আরো কয়েকশত পরিবার। আমরা এখনো সরকারি কোন ত্রাণ সহযোগিতা পায়নি। তবে বেসরকারি সংস্থা ১৮০টি পরিবারকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারিভাবে ঢেউটিন বা সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। শুকনো খাবারের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ঢেউটিন ও অন্যান্য সহযোগিতা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুটি উপড়ে যাওয়ায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের গড়া কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা এসে পৌঁছায়নি। এরপরও সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪০০ বান ঢেউটিন, ঘর প্রতি তিন হাজার নগদ টাকা বিতরণ করতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বুধবারের দিকে তা দ্বীপে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যায়। দূর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সহযোগিতা দেয়া হবে।

সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিজিবি
ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত সেন্টমার্টিন দ্বপি পরিদর্শন করে দূর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে টেকনাফ ২ ব্যাটলিয়নের সেন্টমার্টিন বিওপির সহাতায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮শত পরিবারের মাঝ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। এ সময় বিজিবির সদরদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃদ্ধ, কক্সবাজার রিজিওয়ন কমান্ডার, টেকনাফ ব্যাটলিযন অধিনায়কসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানবিক সহযোগিতায় নৌবাহিনী
সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মঙ্গলবার দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে চিকিৎসা ঔষুধ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ছোলা, লবন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় মেডিকেল টিম গঠন করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। পরিস্থিত উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নৌ-বাহিনীর এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌ-বাহিনীর সহকারী পরিচালক সাইদা তাফসী রাবেয়া লোপা।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ