হাসান-ওহি-অনুভব তিনজনই কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওহি তাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন। সম্প্রতি একটি ক্লাস শেষে ক্যাপ্টেন ওহির স্কুল টাই-টা অকস্মাৎ খুলে নেয় সহপাঠী অনুভব। ওহি- এ দুষ্টুমিকে অশোভন বলার পরপরই টাই-টা দিয়েই অনুভব মুখের ঘাম মুছতে শুরু করে। এ ঘটনায় দুজনের বাকবিতন্ডা বেঁধে যায়। তাদের নিভৃত করতে মাঝখানে এসে দাঁড়ায় আরেক সহপাঠী হাসান। এ কাজটি কোনভাবেই সঠিক হয়নি এমন কথায় হাসানকে থাপ্পড় মেরে দেয় অনুভব। এতে দুজনের হাতাহাতি লাগে। পরে তা মিটেও যায়।
কিন্তু ঘটনা মনে পুষে রেখে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের আগের দিন কক্সবাজার শহরের গোলদিঘীর পাড়ে বাড়ির কাছে কোচিং এ পেয়ে হাসানকে আবারো প্রহার করে অনুভব। কোচিংয়ের ঘটনারও মিমাংসা হয়। তবে তাতেও মন ভরেনি অনুভবের। এলাকার অন্তরঙ্গ কিশোর গ্যাং বন্ধুদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে হাসানকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা নেয়। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এ বিষয়ে আলাপের পর অত্যাধুনিক চাকু ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত ১৬ মে বেলা পৌনে ১২টার দিকে স্কুলে ঢুকার পথে ফিল্মী স্টাইলে আক্রমণ করে হাসানের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এসময় তাকে বেদম প্রহারের পর লোকজন এগুচ্ছে দেখে কিশোর গ্যাং সদস্যরা রক্তাক্ত জখম করে হাসানকে ফেলে পালায়। রক্তাক্ত হাসানকে পথচারীরা উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অস্ত্রোপচারের পর হাসান এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত মো. হাসান (১৭) কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ রুমালিয়ারছরার এবিসি ঘোনা এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের ছেলে। তারা বর্তমানে উত্তর রুমালিয়ারছরা ব্রিকফিল্ড রোডের নুর গার্ডেনে বাস করেন।
ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মা বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা প্রচেষ্টা মামলা করেছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলো, কক্সবাজার পৌরসভার ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা সজলের ছেলে উজ্জ্বল (১৮), একই এলাকার প্রবীর বিশ্বাসের ছেলে অনুভব বিশ্বাস (১৭) ও দিলীপ দে’র ছেলে দেবজিত দে (১৭)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় বাদিনী ফাতেমা বেগম উল্লেখ করেন, আসামীরা শহরে বিরাজমান কিশোর গ্যাং চক্রের সক্রিয় সদস্য। ছেলে হাসানের সাথে তার সহপাঠী অনুভবের বিদ্যালয়ে তুচ্ছ বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরেই ক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি-ধমকির এক পর্যায়ে ১৬ মে বেলা ১২টার দিকে স্কুলে ঢুকার প্রাক্কালে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের সামনে রাস্তার উপর ছুরিকাঘাত করে। অভিযুক্তরা অকস্মাৎ এসে তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে হাসানকে ঘিরে ধরে অনুভবের নির্দেশে উজ্জ্বল পেটে ছুরিকাঘাত করে। বাকিরা এলোপাতাড়ি পেটায়। হাসানের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা পালিয়ে। তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়ার পর অস্ত্রোপচারের পর এখনো চিকিৎসাধীন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার পর কিশোর গ্যাং সদস্যরা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। এখন বাঁচিয়ে রেখে সামনে হাসান ও তার ভাইকে খুন করার ভয় দেখাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একে অপরের সাথে আলোচনা করে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবাে ঘটনার দিন হাসানকে খুন করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে দাবি করে কিশোর গ্যাং সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, দশম শ্রেণীর ক্যাপ্টেনের টাই খোলা ও ঘাম মোছা নিয়ে সহপাঠিরা দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। স্কুলের শ্রেণি কক্ষের ঘটনা প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মিটমাট করার পরও হাসান ও অনুভব এর রেষ বাইরে এনে বিতন্ডায় জড়িয়েছে। এনিয়ে গোলদীঘির পাড়ে কোচিংয়েও হাতাহাতি হয়। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে এলাকার বন্ধুদের সহযোগিতায় স্কুল গেইটে হাসানকে ছুরিকাঘাত করেছে অনুভব। এ ঘটনায় মামলার পর অভিযুক্ত অনুভব গ্রেফতার হলেও বাকিরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সদস্যদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
তবে, কক্সবাজার জব্বারিয়া একাডেমীর প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিম বলেন, স্কুলের ঘটনা হলেও বিষয়টি আমার কাছে আসেনি। ছুরিকাঘাতের ঘটনাও স্কুলের বাইরে। মামলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে একজন হাসপাতালে ও আরেকজন কারাগারে। অভিভাবকরা আমাদের কাছে আসেনি, তাই আমরাও এব্যাপারে মাথা ঘামাইনি।