spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদবন্দর নগরীভাড়াটিয়ার গ্রাসে রেলের জরাজীর্ণ স্টাফ কোয়ার্টার, স্টাফ থাকছেন অন্যত্র

ভাড়াটিয়ার গ্রাসে রেলের জরাজীর্ণ স্টাফ কোয়ার্টার, স্টাফ থাকছেন অন্যত্র

হাসান সৈকত
spot_img

সমস্যার কোন কমতি নেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন রেলওয়ে কলোনি ও স্টাফ কোয়ার্টারগুলোতে। বিদ্যুৎ, পানি ও জরাজীর্ণ কোয়ার্টারসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রেলওয়ের কলোনিগুলো। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই রেলওয়ের নিম্নস্তরের কর্মচারীদের মধ্যে। তাদের দাবি, বারবার মেরামতের জন্য আবেদন করা হলেও কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছেন না দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত স্টেশন কলোনিতে কোয়ার্টার সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২শ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০০টির মধ্যে প্রায় প্রতিটি কোয়ার্টারের অবস্থা খুবই নাজুক। ঘরগুলোর ভাঙাচোরা অবস্থা, বৃষ্টির সময় চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। ময়লা দুর্গন্ধে ভরা কলোনির পরিবেশ। তদারকির অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে কলোনিগুলো। তারপরও এক প্রকার বাধ্য হয়ে থাকছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার নিজের নামে থাকা কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে চলে যাচ্ছেন অনত্র। যাতে তার পরিবার বসবাসের জন্য একটি ভালো পরিবেশ পায়।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয় সিআরবির ঠিক ১০০ গজের মধ্যেই অবস্থিত রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি। বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই এটি একটি সরকারি কলোনি। অনিয়ম, পরিদর্শনের অভাব ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবহেলায় কলোনিগুলো পরিণত হচ্ছে বাস্তুহারাদের বস্তিতে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার তদারকি না থাকায় এসব কলোনিতে গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসাসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের সিন্ডিকেট। আর এসব কারণে নিজেদের কোয়ার্টার গুলো ভাড়া দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করছেন অনেক কর্মচারী।

শুধু এই দুটি কলোনি নয়, চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রায় প্রতিটি কলোনির চিত্রই ঠিক এমনই। কলোনিতে বসবাসরত একজন কর্মচারী বলেন, কলোনিতে পরিবার নিয়ে সুস্থ ভাবে বসবাস করবো তার কোনো উপায় নেই। রাস্তাঘাট ভাঙা, বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়, ময়লা আবর্জনা ও দুর্গন্ধে ভরা কলোনির পরিবেশ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে কোয়ার্টারগুলো দেওয়া হয়েছে তার প্রায় প্রতিটি ঘর মেরামত প্রয়োজন। বারবার মেরামতের জন্য আবেদন করা হলেও তার কোন ফল পাওয়া যায়নি।

আরেকজন কর্মচারী বলেন, বাসা ভাড়া বাবদ আমাদের বেতন থেকে ৫৫ শতাংশ টাকা কেটে রাখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে যে পরিমাণ টাকা কেটে রাখে সে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা রেল আমাদের দিচ্ছে না।

অপর এক কর্মচারী বলেন, আমার বাসায় বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা আছে। ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টির সময় টিনের চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। চালের মেরামত করা প্রয়োজন। আমি ঘর মেরামতের জন্য আবেদন করেছি। তবে এতে কোনো কাজ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মেরামতের জন্য আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ এসে মেরামত করে দিয়ে যাবে সে আশায় বসে থাকা বোকামি। একটি বাতি নষ্ট হলে তা পরিবর্তন করতে করতে আরও তিনটি বাতি নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়াও কলোনিতে সঠিকভাবে পানির সাপ্লাই হয় না। পানিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। এই পানি খাওয়ার উপযোগী নয়। আমাদেরকে বাইরে থেকে খাওয়ার পানি কিনে খেতে হয়—যোগ করেন তিনি।

কলোনীগুলোর এমন দূরাবস্থার জন্য অনেকেই দায়ী করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, রেলওয়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তা তাদের জন্য বরাদ্দ করা কোয়ার্টার গুলোতে থাকেন না। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারগুলোতে যদি তারা থাকতেন তবে কলোনিগুলোর এমন বেহাল দশা হতো না। অফিসাররা থাকে না বলেই কলোনিতে কোনো প্রকার তদারকি হয় না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসারদের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারগুলোর বেশিরভাগই খালি এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।

এই সকল অনিয়ম, অবহেলা ও দূর্ভোগ নিয়ে রেলওয়ের পূর্বঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই বছরে বাসাবাড়ি মেরামত সংক্রান্ত কোনো প্রকার বাজেট পাশ হয়নি। যদি জরুরিভাবে ঘর মেরামতের প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে রেল বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিবে।

এছাড়াও পরিষ্কার পানি সাপ্লাইয়ের ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে রেলওয়ের পাম্প গুলো থেকে পানির সাপ্লাই কম হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে পানি সরবরাহের পরিকল্পনা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত পানি সমস্যার সমাধান হবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ