কক্সবাজারে বেসরকারিভাবে উৎপাদিত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে সক্ষমতা যাছাইয়ের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বুধবার (২৪ মে) কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল-পিএমখালী ও চৌফলদন্ডি ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী এলাকায় নির্মিত প্রকল্পটি পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেছেন। বুধবার বিকেলেই এ প্রকল্পের বৈদ্যুতিক লাইন ১৩২ কেভির (এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্ট) ঝিলংজা বিদ্যুৎ গ্রীড উপকেন্দ্রে সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী বলেন, কক্সবাজারের খুরুশকুলে দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রীডে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হতে যাচ্ছে। আগামীকালকের মধ্যে প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যাবে বলে আশা করছি।
বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা ইউএস-ডিকে গ্রীন এনার্জি লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মুকিত আলম খান বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ইউএস-ডিকে গ্রীণ এনার্জি লিমিটেডের সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী-পিএমখালী ইউনিয়নে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিশেষ সেলের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ মনিটরিং করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চূড়ান্তভাবে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মুকিত খান আরো বলেন, বুধবার বিকেল থেকে ১৩২ কেভির সাথে প্রকল্পের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন সংযুক্তের কাজ শুরু হয়েছে। সঞ্চালন লাইনটি কক্সবাজার সদরের খরুশকুল-চৌফলদন্ডি-পিএমখালীর উপর দিয়ে ঝিলংজা বিদ্যুৎ গ্রীড উপকেন্দ্রে সংযুক্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার হতে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করে সক্ষমতা পরীক্ষা হবে। পরে তা সার্বক্ষনিক চালু অবস্থায় থাকবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে।
ইউএস-ডিকে গ্রীন এনার্জি বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, বাতাস থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২২টি টারবাইন স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি টারবাইন ৩-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। ইতোমধ্যে ১০টি টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাকআপের জন্য স্ট্যান্ডবাই হিসেবে দুটি টারবাইন বসানো হবে।
তিনি আরো জানান, প্রকল্পটিতে ১২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রস্তাবনাও জমা দেয়া হয়েছে, যার জন্য আরও ২০টি টারবাইনের প্রয়োজন।
বুধবার (২৪ মে) প্রকল্প স্থান পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী বলেন, দেশের বিদ্যুতের চাহিদার যোগান দিতে সরকার বেসরকারি খাতে আরো নতুন করে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণে সুযোগ দিচ্ছে। কক্সবাজারের খুরুশকুলের এই প্রকল্প চলতি বছরের শেষের দিকে পুর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। তবে, প্রাথমিক পরীক্ষামুলকভাবে জাতীয় গ্রীডে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত হচ্ছে।
এসময় তার সাথে ছিলেন, অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যুৎ জ্বালানি মন্ত্রণালয়) সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড( বিডিপিডি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, টেকসই ও নবায়ন যোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসআরইডিএ-স্রেডা)’র সদস্য খন্দকার মো. আব্দুল হাই, ইউএস-ডিকে গ্রীণ এনার্জি (বিডি) লিমিটেড ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম খান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর (পরিচালক) সাজিদ রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ প্রমুখ।
খুরুশকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, বায়ু বিদ্যুত প্রকল্পটি অধিকাংশই পরিবেশ সম্মত। এটি করতে জায়গাও লেগেছে কম। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হলে সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্প এলাকার অনেক কর্মক্ষম লোককে কর্মসংস্থানও দিয়েছে। আমরা চাই দেশের উপকূলে পরিবেশসম্মত এ প্রকল্প আরো গড়ে উঠুক।