আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশ নতুন ভিসানীতি স্বাগত জানানোয় যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় বলেও জানিয়েছে দেশটি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৫ মে) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একথা জানান। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি যেমন বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা প্রত্যেকের দায়িত্ব— সরকার, বিরোধী দল এবং অন্য সবার। আমরা আশা করছি এই বছরের শেষদিকে বা সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। সেখানে কি আপনি বিরোধী দলকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন?
এই প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনও রাজনৈতিক দলের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সে বিষয়ে আমি কোনও কথা বলব না। আমি যেটা বলব, তা হচ্ছে— অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারণেই আমরা গতকাল বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছি।
তিনি আরও বলেন, গতকাল মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা আমরা দিয়েছি, তা (বাংলাদেশ থেকে) স্বাগত জানানোয় আমরা আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে স্থায়ী উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই কারণেই আমরা এই ঘোষণা দিয়েছি, এবং উভয় দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
এর আগে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে এক নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত বুধবার (২৪ মে) এ কথা ঘোষণা করেন।
এই নীতির আওতায় কোন বাংলাদেশি যদি দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় – তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। যে সব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচালের আওতায় পড়বে সেগুলোও মার্কিন বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসেব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে – ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো, এবং এমন কোন পদক্ষেপ – যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখা।
বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট-এর ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা বলে এই নতুন নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন এই নীতির কথা ঘোষণা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বুধবার বলেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার দায়িত্ব এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের সবার প্রতি সমর্থন জানাতেই তিনি এই নীতি ঘোষণা করেছেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার পাশে রয়েছে বলে মনে করে সরকার।
এতে আরও বলা হয়, নিজেদের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ অনেক বেশি সচেতন। ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে কোনো সরকারের ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটের অধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে। আর এই অধিকারের জন্য নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের রাজনৈতিক ইতিহাস তার রয়েছে।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৫ মে) আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ওইদিন বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।