spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
সোমবার, ৫ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদজাতীয়আদালতের আদেশ অমান্য করে রেলে ‘নতুন নিয়োগ’

অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী না করে নতুন নিয়োগের পরিকল্পনা

আদালতের আদেশ অমান্য করে রেলে ‘নতুন নিয়োগ’

spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রায় ৭ হাজারের অধিক কর্মচারি অস্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগেই কর্মরত আছেন প্রায় ৪ হাজার ২৬৫ জন। তাদের অধিকাংশই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি। আইন অনুযায়ী, কোনো কর্মচারি নিরবিচ্ছিন্নভাবে টানা তিন বছর অস্থায়ী পদে কাজ করলে রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের নিয়ম থাকলেও সেটি উপেক্ষা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রায় ১ হাজার ২শ অস্থায়ী কর্মচারিকে স্থায়ী পদে নিয়োগের নির্দেশনা থাকলেও সেটি আমলে না নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত কর্মীদের স্থায়ী নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৮ হাজারের বেশি অস্থায়ী কর্মী রেলওয়ের গেটকিপার, পি-ম্যান, ওয়েম্যান, খালাসিসহ বিভিন্ন চতুর্থ শ্রেণীর পদে কাজ করছেন। ২০২০ সালে রেলওয়ের নতুন নিয়োগবিধি প্রণয়নের পর অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের পরিবর্তে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আলোকে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছে।

উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে রেলওয়ের সংস্থাপন শাখা থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রিট পিটিশনে রায়প্রাপ্ত রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারিদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু আদালতের রায় না মেনে অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়োগের পরিবর্তে নতুন করে বিভিন্ন সার্কুলারের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে রেল। এতে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আদালতের রায়প্রাপ্ত ৪০০ থেকে ৪৫০ শ্রমিক ভুগছেন হতাশা ও আশঙ্কায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি আদেশ, উচ্চ আদালতের রায় মেনে রাজস্ব খাতে নিয়োজিত অস্থায়ী কর্মচারিদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে আমরা দীর্ঘদিন ধর আন্দোলন করছি। কিন্তু রেলওয়ে সরকারি আদেশ কিংবা আদালতের রায় অমান্য করে দিনের পর দিন অস্থায়ী শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চতর পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি, ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিও দিয়েছি।’ রাজস্ব খাতের অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগের পর ক্রমান্বয়ে প্রকল্পের শ্রমিকদেরও রাজস্ব খাতে নিয়ে আসতে রেলওয়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রেলওয়ে টিএলআর ঐক্য ফোরামের নেতারা বলছেন, ‘অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের বিষয়ে একাধিক মামলা উচ্চ আদালতে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি শ্রমিক রায় পেয়েও স্থায়ী নিয়োগ পাচ্ছে না। রেলওয়েতে শ্রমিক কর্মচারি সংকট থাকায় অস্থায়ী এসব শ্রমিকরা অনিয়মিত বেতন-ভাতা সত্ত্বেও বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে।’ বর্তমানে শ্রমিকদের স্থায়ী না করার কারণে সারাদেশের রেলওয়ে শ্রমিকরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঐক্য ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

২০২১ সালে হাইকোর্ট বিভাগের কনটেম্পট নং-৫০৪/২০২০ এর রায় ও আদেশ অনুযায়ী পিটিশনে উল্লেখিত ৯৬ জন পিটিশনারকে রেলওয়ের রাজস্ব খাতভুক্ত শূন্যপদে স্থায়ীকরণের কার্যক্রম শুরু করে রেলওয়ে। তবে অনুমোদন থাকার সত্ত্বেও ৯৬ জন রায়প্রাপ্ত অস্থায়ী কর্মীকে এখনো নিয়োগ দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এইদিকে আদালতের মাধ্যমে রায় নিয়ে আসা শ্রমিকদের নিয়োগ না দিয়ে নতুন করে কর্মী নিয়োগের একের পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

একইভাবে কনটেম্পট নং-১৩২/২০২০ এর রায় ও আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৭ জন শ্রমিককে স্থায়ী নিয়োগ দিতে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি নির্দেশনা দেয় রেলওয়ে। এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত এসব শ্রমিককে নিয়োগ দিতে পারেনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। একইভাবে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর পশ্চিম রেলের অতিরিক্ত সিওপিএস (তৎকালীন) হাসিনা খাতুন ১৬৩ অস্থায়ী শ্রমিককে রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের নির্দেশনা দিলেও এখনো তিনি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি রেলওয়ের সংস্থাপন বিভাগ। ৬৫৬৬/ ২০১৫, ৬৭৭৭/ ২০১৫, ৫২৯/ ২০১৬, ৮৫৯৪/ ২০১৭-সহ বিভিন্ন রিট পিটিশনে প্রায় ১ হাজার ২০০ এর অধিক অস্থায়ী শ্রমিককে রেলওয়েতে স্থায়ীকরণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে আদালত অবমাননার পাশাপাশি দীর্ঘদিন রেলওয়েতে অস্থায়ীভাবে কাজ করা দক্ষ শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

অস্থায়ী কর্মচারিদের অভিযোগ, রেলওয়েতে নিয়ম ছিল টানা তিন বছর অস্থায়ীভাবে কাজ করলেই নতুন নিয়োগের মাধ্যমে এসব শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়। কিন্তু রেলওয়ে দক্ষ অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিং পদ্ধতির মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে। এতে স্থায়ীকরণের আশায় দীর্ঘদিন ধরে ‘কাজ নাই, মজুরী নাই’ পদ্ধতিতে কাজ করে আসা শ্রমিকরা অন্য কোন পেশায় যায়নি।

বর্তমানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আইনের তোয়াক্কা না করে শ্রমিকদের বাদ দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে রেলওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখায় ঝুঁকি ও সেবার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী কর্মচারী ঐক্য পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারিরা রাজস্বখাতে স্থায়ী নিয়োগের সুযোগ নেই। সম্প্রতি রেলওয়ে প্রকল্পের নিয়োগকৃত গেটকিপার/ গেটম্যানদের রাজস্বভুক্ত স্থায়ী শূন্য পদে নিয়োগের জন্য একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। ১০ মে দেয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞতা হিসাবে শুধুমাত্র ২ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে পূর্ণ হওয়া প্রকল্পের শ্রমিকদের আবেদনের শর্ত দেয়া হয়েছে। অথচ ৩ বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত রেলওয়েতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করার পরও এসব অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চলমান রয়েছে। রেলওয়ের আইন শাখার অনুমোদন সাপেক্ষে স্থায়ীকরণের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নতুন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে কিছু চতুর্থ শ্রেণীর শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ