spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
সোমবার, ৫ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদবৃহত্তর চট্টগ্রাম‘বন্দুকযদ্ধে’ শীর্ষ ইয়াবা ডন হাজী সাইফুলের বিদায়ে আতঙ্কে ‘আশ্রয়দাতারা’

‘বন্দুকযদ্ধে’ শীর্ষ ইয়াবা ডন হাজী সাইফুলের বিদায়ে আতঙ্কে ‘আশ্রয়দাতারা’

spot_img

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

রাষ্ট্রীয় তালিকার প্রধান গডফাদার হিসেবে অভিযুক্ত ইয়াবা কারবারি সাইফুল ইসলাম ওরফে হাজী সাইফুল করিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর থেকে আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছে তার দির্ঘদিনের আশ্রয়-পশ্রয়দাতা ও সহযোগিদের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার (৩০মে) দিনগত রাত ১টার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দরের সীমানা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারাগেছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এসময় ঘটনাস্থল হতে ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ওসি।

নিহত সাইফুল ইসলাম ওরফে হাজী সাইফুল করিম (৪৫) টেকনাফ শীলবুনিয়াপারার মোহাম্মদ হানিফ ওরফে হানিফ ডাক্তারের ছেলে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার প্রধান ইয়াবা গডফাদার এবং সীমান্ত উপজেলার ১নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী ও টেকনাফ থানার কয়েকটি মামলার পলাতক আসামি।

এদিকে, দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বিদেশ থেকে এসে আটক ও বন্দুকযুদ্ধে সাইফুল নিহত হয়ে ইতিহাস হলেও আর্থিক সুবিধা নিয়ে তার ইয়াবা সামরাজ্যে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া প্রভাবশালীরা চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে। সাইফুল করিম দেশে ফিরে আটক হবার পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া অনেকের নামই ফাঁস করে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

তার ইয়াবা কারবারে ছায়া হয়ে থাকা এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও কিছু সাংবাদিকও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাইফুল করিম ইয়াঙ্ঘুন থেকে দেশে ফেরার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বিশেষ দল কক্সবাজার যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছর ১৬ মে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর পর গা-ঢাকা দেন সাইফুল করিম। দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থেকে প্রায় ৯ মাস পর দেশে ফিরেন সাইফুল করিম। এরপরই তাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেয় পুলিশ।

সেখানেই সাইফুল করিম তার ইয়াবা সামরাজ্য বিস্তার নিয়ে কথা বলেন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে। তিনি সেখানে জানান, ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রামে পড়া লেখা করার সময় তিনি ইয়াবা কারবার শুরু করেন। টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসার বিস্তৃতি চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাড়ান তিনি। এখানে ঘাটে ঘাটে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতেন। বিনিময়ে তার ‘নিরাপত্তা গার্ড’ হিসেবে কাজ করতেন সুবিধাভোগী প্রভাবশালী চক্র।

দ্রুত অর্থনৈতিক উত্তাণের পর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি টেকনাফ স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সেখানে লোক দেখানো ভাবে নানা পণ্য আমদানিও করতেন। সরকারকে দিয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও। এভাবে তিনি নিজের নামের সাথে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) তকমা লাগান। এরপর আর তাকে পেছনে ফিওে তাকেতে হয়নি। তিনি বিনা বাধায় চষে বেড়িয়েছেন দেশের সর্বপ্রান্ত এবং বিদেশ। ২০০০ সালের পর তাকে ছায়ার মতো সহযোগিতা দিয়েছেন সাবেক এক এমপি। জনশ্রুতি রয়েছে সেই এমপি তার পার্টনারও।

২০০৮ সালের পর থেকে সাইফুল স্বপরিবারে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে আবাস গাড়েন। সেখান থেকেই স্থল, নদী ও আকাশ পথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিয়েছেন অনায়াসে। এ কাজে সাবেক এমপিসহ ঘাটে ঘাটে থাকা ‘সেইফগার্ড’ গণ সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন বলে প্রচার রয়েছে। এতসব কিছু হয়ে আসলেও তিনি কোন মামলায় সরাসরি অভিযুক্ত হননি। মিডিয়া সাপোর্টের জন্য দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমকর্মীদের নানা ভাবে উপঢৌকন পৌঁছে দিয়েছেন সাইফুল করিম। এসব বিষয় তিনি জিজ্ঞাসাবাদে শৃংখলা বাহিনীকে বলে গেছেন বলে দাবি অসমর্থিত সূত্রের।

এদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র মাদক কারবারি ও গডফাদারদের তালিকা করা শুরু করলে মিয়ানমারে চলমান ৩৭ ইয়াবা কারখানার বাংলাদেশী এজেন্ট হিসেবে নাম চলে উঠে আসে সাইফুল করিমের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন তালিকায় শীর্ষে কয়েক নাম্বারে স্থান করেনেন সাইফুল করিম। একদিকে সিআইপ, অন্য দিকে ইয়াবা গডফাদার’ দুই পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় শৃংখলা বাহিনী। অবশেষে সেই দ্বিধা কাটিয়ে ইয়াবা গডফাদার সাইফুলের ইতিহাস অতীত হয়ে গেছে শুক্রবার ভোরে। এখন সবার অপেক্ষা তার ‘সেইফ গার্ড’দের জনসম্মুখে এনে ইতিহাসে ঠাই করানোর।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেছেন, আইন আইনের পথে হাটছে। যাদের কারণে ইয়াবা দেশময় ছড়িয়েছে তাদের সবাইকে ক্রমান্বয়ে আইনের আওতায় আনা হবে। ইয়াবায় সম্পৃক্তদের রেহায় নেই।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ