কৃষি বৈচিত্র্যে ভরপুর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা। খাদ্যশস্য উৎপাদনে অন্যতম এ উপজেলাকে কৃষিক্ষেত্রে সমৃদ্ধ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ ।
বোয়ালখালী উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকেই কৃষি বিভাগের কার্যক্রমকে কৃষকদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়াসহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণে দৃশ্যমান কাজের তাগিদে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কখনো অফিসে, কখনো ফসলের মাঠে আবার কখনো ছোটাছুটি করছেন বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে।
নতুন নতুন ফসল অন্তর্ভুক্ত করা এবং এই উপজেলার উৎপাদিত ফসলের বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি ও দেশের বিভিন্ন সুপারশপে মার্কেটিং তৈরিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ। এছাড়াও উপজেলার উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি ও ফল গুণে-মানে সেরা সেই বিষয়টি তুলে ধরতে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
খামার যান্ত্রিকীকরণে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার, রিপার মেশিন, ফুট পাম্প স্প্রেয়ার বিতরণ করেছেন। পাহাড়ের কৃষিতে এনেছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এক সময় পাহাড়ি এলাকায় বনজ গাছ ছাড়া আদা ও কাগজি লেবু হতো। এখন সকল ধরনের সবজি ও ফসল চাষ হচ্ছে।
কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ এ কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয় নগর উপজেলার কেনা গ্রামের শিক্ষক মরহুম আবদুল মোতালিব ও ফাতেমা বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান।
তিনি বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারের (৩১তম ব্যাচের) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে (২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারী) কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর রামু, পেকুয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সাফল্যের সাথে কাজ করে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বোয়ালখালীতে যোগদান করেন।
যোগদানের পর থেকেই কৃষকদের কাছে উচ্চমূল্যের ফসল চাষ ও এর সম্প্রসারণ, শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভার্মি কম্পোস্ট তৈরী ও এর ব্যবহার, সাথী ও মিশ্র ফসল চাষ, কন্দাল ফসলের চাষ, ফুল চাষ, মসলা জাতীয় ফসলের চাষ, ডাল জাতীয় শস্যের সম্প্রসারণ, তেল জাতীয় ফসল সরিষা, সূর্যমুখি, মৌচাষসহ বিভিন্ন জাতের নতুন ফসল এর সম্প্রসারণ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়াও কৃষকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নসহ নানা ধরনের জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বোয়ালখালীতে দায়িত্ব নেয়ার পর বিগত বছর ফলদ বৃক্ষমেলা করেছেন যা উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রশংসিত হয়।
মেলায় আগত দর্শনার্থী ও কৃষকগণ যাতে কৃষি বিভাগের চলমান কার্যক্রম ও কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে সেজন্য তিনি ফলদ বৃক্ষ মেলাকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তির সুন্দর উপস্থাপন করেছিলেন।
২০২২ সালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল উদ্ভাবনি মেলায় তার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগ কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তথ্যসহ সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (১ম স্থান) এবং স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় (২য় স্থান) অর্জন করে।
ওই কর্মকর্তার কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতায় উপজেলার ব্লক পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে বোয়ালখালীর কৃষি পরিবারকে সকলের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রায়শই দেখা যায়, ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ কৃষকদের স্বার্থে, কৃষির উন্নয়নের স্বার্থে ফসলের মাঠে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বোয়ালখালী উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক বকুল বলেন, কৃষি নির্ভর এই দেশের সার্বিক উন্নয়নে একমাত্র বিপ্লব ঘটাতে পারে এ দেশের কৃষকেরা। তাই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে বোয়ালখালী উপজেলায় কৃষকদের এগিয়ে নিতে কৃষি অফিসার মো. আতিক উল্লাহ সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তরিকভাবে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ওই কর্মকর্তা একজন জনবান্ধব কর্মকর্তা।
প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , কৃষকদের উন্নয়নে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা কৃষিতে ভুর্তকি দিয়ে আসছেন সরকার।
সার, প্রণোদনা, পুনর্বাসন তুলনামূলক কম বরাদ্দ প্রদান করা হতো। কিন্তু আতিক উল্লাহ স্যার এই উপজেলায় যোগদান করার পর পূর্বের তুলনায় এই বরাদ্দের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধির জন্য সবসময় সচেষ্ট আছেন এবং এই প্রণোদনা ও পুনর্বাসন যেন প্রকৃত কৃষকেরা পায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
হক এ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মিনারুল হক মিন্টু বলেন, পরিত্যাক্ত জমি কিভাবে চাষের আওতায় আনতে হয় তা দেখিয়েছে আতিক স্যার। তার আন্তরিক পরামর্শে ৮ একর অনাবাদি জমিতে মিশ্র ফলের বাগান গড়ে সফল হয়েছি।
কৃষি অফিসার মো আতিক উল্লাহ বলেন, কাজের মধ্যে সফল হওয়া দুরূহ কোন বিষয় নয়, প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতা। তবে আমি বলব এই উপজেলার কৃষকরা অনেক অগ্রগামী এবং নতুন ফসল চাষে যথেষ্ট আগ্রহী তাই এই উপজেলার কৃষি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়াও আমার অফিসের সবাই একটা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করি। যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা দ্রুত বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারসহ মাঠ পর্যায়ে সকল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ নিরলসভাবে কৃষকের পাশে থেকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
যদি এই উপজেলায় আরো কিছুদিন থাকা স্বম্ভব হয় তাহলে উপজেলার কৃষি শুধু চট্টগ্রাম নয় পুরো দেশের কৃষির জন্য অনুকরণীয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।