কুরবানির ঈদের বাকী মাত্র চার দিন। আর এই ঈদকে সামনে রেখে কুরবানীর পশু জবাইয়ের অন্যতম উপকরণ চাকু, দা, বটি ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রস্তুত করতে ভিড় জমিয়েছে কামারের দোকানে। আর এসব তৈরিতে শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পেশাদার কামার শিল্পীরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। টুংটাং শব্দে মুখরিত চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কামারের দোকানগুলোতে।
জৈষ্টপুরা গোলককানুন বাজার এলাকায় ১৫ বছর ধরে কামারের কাজ করেন সুজিত দে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাজ একটু বেশি, কোনো শ্রমিক নাই। নিজে যতটুকু পারি কাজ করছি। এতে খরচ বাদ দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে।
পরিশ্রমের তুলনায় এই পেশায় সাধারণত আয় কম। তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। বাপ-দাদার কর্ম ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন বলে জানান। কামাররা বলেন, এক সময় তাদের যে কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এখন হাতে তৈরীর জিনিসের কদর কমে গেছে। তাই সারা বছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কুরবানি উপলক্ষে তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়।
উপজেলার মুরাদমুন্সি হাট এলাকার কামার শিল্পী দীপক করের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে আকাশ কর ও বড় ভাই রনজিত করকে নিয়ে কাজে ব্যস্ত। দীপক কর বলেন, অনেক কষ্টে আমরা বাপ-দাদার কর্ম ঐতিহ্যকে এখনো ধরে রেখেছি। সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ বহন করার মত যথেষ্ট টাকা আমাদের নেই, তাই কি আর করা।
তিনি আরও বলেন, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার কামার শিল্পীরা স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে দোকান সাজিয়ে রেখেছেন।
গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম বাড়তি হওয়ায় আকারভেদে দা ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছুরি ছোট ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, বটি ৪৫০ থেকে ১০০০ টাকা, চাপাতি ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বেচা-কেনা হচ্ছে।
লোহার দাম ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির কারণে দাম একটু বেড়েছে বলে জানান দয়াল কর নামের এক শিল্পী।
তিনি বলেন, কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আযহার মৌসুমে তাদের ব্যবসা কিছুটা আলোর মুখ দেখে। তবে মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তোবা এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখনকার প্রজন্ম কামার কে? তাদের কাজ কি? তারা কি ধরনের জিনিস বানায় বা বানাত? এবিষয়ে তারা চিনতে-জানতে পারবে না। অন্তত বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এই কামার শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তারা।
দেখা গেছে, মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি দেখতে সুন্দর ও ধারালো হয়, এমনকি দাম ও সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে। তাই হাতে তৈরির চেয়ে মেশিনের তৈরি চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সামগ্রীর কদর ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান ক্রেতারা।