বাংলাধারা ডেস্ক »
ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ২০ জুন মামলার চার্জ (অভিযোগ) গঠনের তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামের নাম চার্জশিটে না থাকায় মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। সোমবার ( ১০ জুন ) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ আদেশ দেন। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রিজন ভ্যানে করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বাদীর নারাজি না থাকায় আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। মামলায় গ্রেফতারকৃত ২১ আসামির মধ্যে ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেন আদালত। আগামী ২০ জুন অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য্য করেন।
এছাড়া চার্জশিটভূক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ৭ জনের জামিন চাওয়া হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। আদালত সূত্র জানায়, খুবই স্পর্শকাতর এ মামলার অভিযোগপত্র ও প্রায় ৮০৮ পৃষ্ঠার সামগ্রিক নথিটি গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।
আদালত সূত্রের তথ্য মতে, সেদিন অভিযোগপত্রসহ কেস ডকেট (সার্বিক নথি) জমা দিলেও বিচারক অভিযোগপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন উর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, বাদীর আপত্তি না থাকায় আজকে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছে। ৭ জন আসামির জামিন চাওয়া হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত বাদী ও আসামি এবং সরকার পক্ষের শুনানি করে সকল আসামির জামিন নামঞ্জুর করেছেন। আগামী ২০ জুন এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য্য করেছেন। ২০ জুন অভিযোগ গঠন হলে স্বাক্ষীর পর্ব ও মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের কোন আপত্তি নেই। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামলাটি তদারকি করছেন। আশা করি শিগগির ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার হবেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, বিচারক আংশিক ন্যায় বিচার করলেও ন্যায় বিচার করেননি। যারা ছাদে নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছিলো সেই ৬ জন ছাড়া বাকী ১০ জনেকে একই গ্রাউন্ডে জামিন দেয়া উচিত ছিলো।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি পক্ষপাতপুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই মামলায় যে অর্ডার হয়েছে তা আইন সম্মত নয়, বরং বেআইনী।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগিরা। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারভূক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি