চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে মাছের সেই প্রাচুর্য আর নেই। একসময় কালুরঘাটের রাম ফাঁইস্যা, মধু ফাঁইস্যা, রিস্যা, পোপা, বাটা, বাচা, চেউয়া, টেংরা, চিড়িং, আইড়, বাইলাসহ হরেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। গত ১০-১২ বছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে মাছ। এসব মিঠাপানির মাছ ছিলো স্বাদে মানে অনন্য। এখন জালে খুব একটা মাছ পড়ে না । আগের মতো মাছ না পাওয়ায় নদী পাড়ের কৈবর্ত্যপাড়ার শতকরা ৯০ জন জেলে অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকার পথ খুঁজছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ডিঙি নৌকা নেই নদীতে। দুয়েকজন মাছের আশায় জাল ফেলেছেন নদীতে। এসময় কথা হয় কৈবর্ত্য পাড়ার নেপাল জলদাসের সাথে। তিনি বলেন, দুপুর দেড়টায় নদীতে বেহুন্দী জাল বসিয়েছি। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১০০-২০০ গ্রাম চিংড়ি ও চিড়িং মাছ পেয়েছি। আগে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। ঝুড়ি ভরে মাছ উঠতো। এখন তা নেই। এক শ্রেণির মানুষ বিষ দিয়ে মাছ ধরেন। ফলে সব মাছ মরে যাচ্ছে।
কধুরখীল কৈবর্ত্য পাড়া এলাকার গোপাল কৈবর্ত্য বলেন, আগে খাল-বিল নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। জালের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক কিন্তু জাল দিয়ে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন । নদীতে বেহুন্দী জাল, টানা জাল, ঘেরা জাল, ঠেলা জাল, হাত জাল, বাঁধা জালসহ নানা ধরণের জাল ব্যবহার করেন জেলেরা। ডিঙি নৌকা করে নদীতে মাছ ধরা হয়। মিলকারখানার বর্জ্যের কারণে অনেক মাছ এখন পাওয়া যায় না। নদীতে বেড়ে গেছে বালু তোলার ড্রেজার। মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, মাঝে মধ্যে সাগরের নোনাপানির মাছ কর্ণফুলীতে আসে। বর্তমানে ওই মাছগুলোই জালে আসে এখন। আগে প্রচুর ডলফিন ঘোরাফেরা করতো নদীতে। এখন দেখাই যায় না।
কালুরঘাটের ফাইস্যা মাছ বিখ্যাত। রান্না করলে অমৃতের মতো হয় ঝোল। আগে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়তো জালে। এখন প্রায় উধাও হয়ে গেছে।
পূর্ব কালুরঘাটে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি একটি মিলে শ্রমিকদের মেসে রান্নার কাজ করেন। এর অবসরে নদীতে মাছ ধরেন। তিনি জানান, ৫-৬ বছর আগেও ভালো মাছ পাওয়া যেতো নদীতে। এখন সারাদিনেও জালে মাছ মিলে না। যাও পাওয়া যায় তা হলো- চিংড়ি, বাটা, বাইলা মাছ। মিল কারখানার বর্জ্যরে কারণে মাছের বংশ নির্বংশ হয়ে গেছে।
পৌরসভার পূর্বগোমদণ্ডী এলাকার খাল পাড়ের বাসিন্দা কৃষ্ণপদ জলদাস বলেন, একসময় নদ-নদীতে প্রচুর মাছ ছিল, খাল-বিল ছিল উন্মুক্ত তাই জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। তাদের ঘরে অভাব ছিল না। এখন আর নদ-নদীতে নেই মাছ তাই দুর্দিন যাচ্ছে জেলে পরিবারগুলোর।
‘নদ-নদীতে মাছ না থাকায় আমাদের কষ্ট বেড়ে গেছে। আমাদেরকে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।