spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদচট্টগ্রামকঠোর আন্দোলনে ট্রেন চালকরা

কঠোর আন্দোলনে ট্রেন চালকরা

হাসান সৈকত
spot_img

রানিং স্টাফদের মাইলেজ জটিলতা নিরসনসহ বিভিন্ন দাবি পূরণের লক্ষ্যে আজ থেকে কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চালকরা। ট্রেন চালকরা বলছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা আর কোনো অতিরিক্ত ডিউটি করবেন না।

রেলওয়েতে লোকোমাষ্টার তথা ট্রেন চালকের সংকট দীর্ঘ দিনের। ২০১৭ সালের পর থেকে বন্ধ রয়েছে রানিং স্টাফদের প্রমোশনও। জনবল সংকটের কারণে রানিং স্টাফদের উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করাসহ প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মঘণ্টার বাইরেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোনো প্রকার বিশ্রাম না নিয়েই শুরু করতে হয় নতুন করে অতিরিক্ত ডিউটি—এমনই অভিযোগ বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চালকদের।

ট্রেন চালকরা তাদের অতিরিক্ত ডিউটি বন্ধ রাখায় আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে সিডিউল বিপর্যয়। লোকোমাষ্টার সংকটের কারণে ও অতিরিক্ত ডিউটি পালন না করায় আজ ভোর ছয়টায় চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটগামি ডেমোট্রেন ও ভোর পাঁচটা ৪৫ মিনিটে এ নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রামগামি ট্রেনের সিডিউল বাতিল করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারীর বিকাল ৫:২০এর ট্রেন ও সন্ধ্যা ৭টার চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এছাড়াও দুই ঘন্টা বিলম্বে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস। আর এ কারণে ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ জনগণ। তাদের দাবি না মানলে এ বিপর্যয়ের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জানান ট্রেন চালকরা।

গত ৪ জুন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গনে রানিং স্টাফদের মাইলেজ জটিলতা নিরসনের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আগামী ১৩ জুনের মধ্যে দাবি নিরসন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন রানিং স্টাফরা।

তাদের দাবি ছিল, রানিং স্টাফদের ৭৫ শতাংশ মাইলেজ যোগে পেনশন ও অন্যান্য জটিলতা নিরসন করতে হবে, আইবাস সিস্টেমের মাধ্যমে স্টাফদের বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে, এবং নিয়োগবিধি ২০২০ পরিবর্তন করে স্টাফদের দ্রুত পদোন্নতি, চুক্তি ভিত্তিক ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।

সে দাবি মেনে নিয়ে গত ১১ জুন ২০২৩ তারিখ অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার নিকট রেলওয়ের মহাপরিচালক কর্তৃক একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। যার স্মারক নং-৫৪.০১.০০০০.০১৮.২০.০৫১.১৯-৭৩৯।

চিঠিতে বলা হয়,  বাংলাদেশ রেলওয়ের এস্টাব্লিশমেন্ট কোড ভলিউম ০১, লোকোমোটিভ এবং রানিং শেড ম্যানুয়াল মোতাবেক বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত রানিং স্টাফদের রানিং এলাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।

তবে গত ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে রেলওয়ের মহাপরিচালকের চিঠির বিপরীতে নতুন একটি চিঠি জারি করেন অর্থ বিভাগ। যার স্মারক নং-০৭,০০,০০০০,০০০,৩৩.০২৫-২০২০ — ১১০১।

উক্ত চিঠিতে রানিং স্টাফদের এলাউন্সের প্রাপ্যতা নির্ধারণ আদেশ স্পষ্টীকরণ প্রসংগে বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগ বলেছেন, অর্থ বিভাগের মতামত গ্রহণ না করে বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রস্থ পত্রের মাধ্যমে মূলবেতনের সাথে চলমান ভাতা যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা প্রদানে নির্দেশনা প্রদান করায় এটি অর্থ বিভাগের মূল আদেশের পরিপন্থি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং নির্দেশনার আদেশটি বাতিলযোগ্য।

এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত রানিং স্টাফদের স্বার্থবিরোধী প্রজ্ঞাপনটি আন্দোলনের মুখে প্রত্যহার করে নিলেও ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর থেকে অবসরে যাওয়া রানিং স্টাফদের পিআরএল শেষ হলেও মাইলেজ জটিলতার কারণে আজ পর্যন্ত তাদের ফাইনাল স্যাটেলমেন্ট সম্পন্ন হয়নি।

রেলওয়েতে রানিং স্টাফ তথা ট্রেনের পরিচালক, ট্রেন টিকিট এক্সামিনার (টিটিই), ট্রেন চালক (এলএম) ও সহকারী ট্রেনচালকের সংকট রয়েছে। এ কারণে রেলওয়ের চাকাকে সচল রাখতে রানিং স্টাফরা প্রতিদিনের স্বাভাবিক কর্মঘণ্টার পরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছে। তবে দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না হলে স্বাভাবিক কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার বলেন, আমরা আছি বলেই রেলের চাকা ঘুরছে। রেলওয়েতে ট্রেন চালকের সংখ্যা প্রয়োজনের চাইতে অনেক কম। সুতরাং আমাদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরো কঠোর হবে। আমরা কোনো অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা চাইনি।

ট্রেন চালকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসাইনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ট্রেন চালকদের মাইলেজ জটিলতা নিরসনের দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। তারা বলছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা কোনো অতিরিক্ত ডিউটি করবেন না।

এছাড়াও ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, লোকোমাষ্টাররা অতিরিক্ত ডিউটি না করায় আজ সকাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটগামি দুটো ডেমোট্রেনের সিডিউল বাতিল হয়েছে। তবে আমরা লোকোমাষ্টারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, যাতে তাদের আন্দোলনের কারণে সাধারণ জনগণের কোনো প্রকার ভোগান্তি না হয়।

তিনি আরও বলেন, ব্যাপারটি এখন আর আমাদের হাতে নেই, এ ব্যাপারে আমরা রেলমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। সব কিছু এখন মন্ত্রণালের হাতে। যেহেতু রেলওয়ের বাজেট পাশ হয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সেহেতু রেল মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে মিটিংয়ে বসে এই সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ