spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদবন্দর নগরী৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে জেলেরা

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে জেলেরা

হাসান সৈকত
spot_img

টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ জেলেদের আপন ঠিকানা সমুদ্রে জাল ফেলেছেন জেলেরা। গত মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞার শেষ হওয়ার পরপরই জাল, দড়ি, মাঝি-মাল্লা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে সাগরে যাত্রা করেছে একাধিক মাছ ধরার ট্রলার। আজ সকালে কেউ কেউ ফিরেছেন মাছ নিয়েও। তবে বাজার ঘুরে চোখে পড়েনি আশানুরূপ ইলিশের পরিমাণ।

সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে নগরীর হালিশহরের রাণী রাসমণি ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকারে সাগরে যেতে জেলেদের মাঝে সাজ সাজ রব। ট্রলারগুলোতে ফিরেছে সাগরে যাওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য। কেউ জাল-দড়ি ট্রলারে তুলছেন, কেউ জ্বালানি তেল সরবারহ করছেন। আবার কোন কোন ট্রলার ফিরেছে মাছ ধরে। সেসব মাছ পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন শ্রমিকরাও। মাছ নিয়ে যেসব ট্রলার ফিরেছে সেসব ট্রলারের জেলেরা জোয়ার ভাটা কম থাকায় আশানুরূপ মাছ না পেলেও নতুন করে যারা সাগরে যাচ্ছেন তারা বাঁধছেন আশায় বুক। সমুদ্রে জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে এমনটা আশা ট্রলার মালিক ও জেলেদের।

এ নিয়ে জেলেরা বলছেন, ঝড়বৃষ্টি না থাকায় জালে মাছের পরিমাণ অনেকটা কম উঠছে। তবে কিছুটা ইলিশ ধরা পড়লেও পুরো মৌসুম শুরু হতে এখনো এক মাস সময় লাগবে। ৯০ ভাগ ইলিশের পেটে ডিম নেই। ইলিশ খুবই গভীর জলের মাছ। ডিম পাড়ার সময় হলে এরা পানির উপরে উঠে আসে। ওই সময়টায় প্রচুর পরিমানে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন জেলেরা।

আব্দুর নবী নামের একজন জাল বিক্রেতা বলেন নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন অনেক কষ্টে দিনপার করেছি। জেলেরা সমুদ্রে না গেলে জালের কোনো কাজ থাকেনা। সেকারণে বেচা বিক্রিও হয় না। যেহেতু নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হয়েছে এবং জেলেরা সমুদ্রে যেতে শুরু করেছে সেহেতু আমি মনে করছি আমারও বেচা বিক্রি বাড়বে।

মোহাম্মদ হাসান নামের একজন জেলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। আমার অধীনে মোট ৪৬ জন লোক কাজ করে। তারা সবাই জেলে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন তারা সবাই অনেক কষ্টে দিন পার করেছে। তবে এখন সমুদ্রে যেতে পেরে তারা সবাই খুশি।

নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ আহরণের শুরুর দিনে কেমন ইলিশ ধরা পড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করেছিলাম অনেক মাছ পাবো তবে জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। তিনি আরও বলেন, ইলিশের মৌসুম শুরু হতে আরো কিছু দিন সময় হাতে আছে। পূর্ণিমায় ইলিশ মোটামুটি পানির উপরে উঠে আসে ওই সময়টায় প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাবো বলে আশা করছি।

মাছের দাম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে সকল ইলিশ ছয় থেকে সাতটায় এক কেজি হয় ওই সকল ইলিশের মণ ১৬ হাজার টাকা। চার থেকে ৫ টায় এক কেজি ইলিশের মণ ২০ হাজার টাকা। কেজিতে একটি হয় এমন ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩শ থেকে ১৭শ টাকা পর্যন্ত।

রাসমণি ঘাটে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে জেলেরা বলেন, টানা ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। অভাব অনটনের মধ্যে কোনোভাবে বেঁচে ছিলাম। ৮৬ কেজি চাল পেয়েছি, তবে শুধু চাল খেয়ে তো আর বেঁচে থাকা যায় না। দাঁদনদারদের ঋণে কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে ছিলাম। এখন সাগরে মাছ যা পাই, দৈনিক মজুরি নিয়ে সব মাছ দাঁদনদারদের দিয়ে দিতে হবে। সে শর্তেই তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। তারপরও নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো। সাগরে যাচ্ছি। বেশ খুশি লাগছে। আমরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে ফিরব।

এ বছরও নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের চাল সহায়তা দিয়েছে সরকার। তবে জেলেরা বলছেন, যে পরিমাণ চাল সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা দিয়ে তাদের পরিবার নিয়ে ৬৫ দিন খেয়ে চলা যায় না। আবার মা ইলিশ সংরক্ষণেও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। অনেকে বরাদ্দের পুরো চাল পানও না।

প্রসঙ্গত, দেশের সমুদ্র সীমায় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। আজ শেষ হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। তবে আগামী বছর থেকে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে একই সময়ে এদেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ