বাংলাধারা প্রতিবেদন »
“শিশুশ্রম নয়, শিশুর জীবন হোক স্বপ্নময়“ প্রতিপাদ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনে চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী চট্টগ্রামসহ ৩০টির অধিক উন্নয়ন সংস্থা সমুহের সমন্বয়ে পালিত হয়েছে দিবসটি।
বুধবার (১২ জুন) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সম্মুখে দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠান ও মানববন্ধনের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম শহরেই সর্বপ্রথম শিশুশ্রম নিরসনের প্রক্রিয়া শুরু করবো। পরিচ্ছন্ন নগরী ও উন্নত পরিবেশ নিশ্চিতে শিশুশ্রম নিরসনের বিকল্প নেই। শিশুশ্রম একটি অমানবিক কাজ এটি অবশ্যই বন্ধ করা উচিৎ। দারিদ্র্যতাই শিশুশ্রমের মূল কারণ।
তিনি আরও বলেন, শিশুশ্রম প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সামান্য অর্থ উপার্জনের লোভে শিশুদেরকে কাজের সাথে যুক্ত করেন অনেক অভিভাবক, শিশুদের অল্প টাকায় কাজ করাতে পারে বলে কিছু কিছু কারখানা মালিকরা তাদেরকে শ্রমে নিয়োগ দেয়, যা কখনো উচিৎ নয়, শিশুশ্রম অনেকটা নির্যাতনের সামিল।
এদিকে, দিবসটিকে ঘিরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন- কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর উপ-মহা পরিদর্শক মোঃ আল আমিন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩এর সমীক্ষায় দেশে শিশুশ্রম ও শিশুশ্রমিকের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে সাড়ে ৩৪ লাখ কর্মজীবী শিশু রয়েছে; যার মধ্যে ২৯ লাখ ৪৮ হাজার পূর্ণকালীন ও ৫ লাখ ২ হাজার খÐকালীন কাজ করে। আবার কর্মজীবী শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই স্কুলে যায় না। পড়াশোনা না করে তারা সংসারের তাগিদে কাজে নেমে পড়েছে। আগে স্কুলে গেলেও এখন আর যায় না, এমন ২১ লাখ কর্মজীবী শিশু রয়েছে।
আর মাত্র ১০ লাখ শিশু পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে। তবে পৌনে ৩ লাখ শিশু কোনো দিন স্কুলের যাওয়ার সুযোগই পায়নি। সব মিলিয়ে স্কুলে যায় না ২৪ লাখ শিশু। কেন তারা স্কুলে যায়নি এমন প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয়েছে বিবিএসের সমীক্ষায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ কর্মজীবী শিশুদের ৩০ শতাংশই পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। ২৮ শতাংশ শিশুর পরিবারের পক্ষে শিক্ষা ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই। ২০ শতাংশ পরিবারের সদস্যরাই চাননি, তাঁদের সন্তানরা স্কুলে যাক। তাঁরা মনে করেন, শিক্ষার দরকার নেই।
এ ছাড়া বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশি; গৃহস্থালির কাজ করাসহ বিভিন্ন কারণে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ও ঘাসফুলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফতাবুর রহমান জাফরী, জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের সহকারি কমিশনার সুরাইয়া ইয়াসমিন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সহকারী মহা পরির্দশক ডাঃ বিশ্বজিৎ রায়, ইলমা‘র প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক রবার্ট কমল সরকার, যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা‘র নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমীন পারভীন।
স্বপ্নীল‘র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলী শিকদার, কোডেকের অলকা চৌধুরী, সংশপ্তকের অগ্রদূত দাশগুপ্ত, আইডিএফ‘র সুদর্শন বড়ুয়া, ইপসা‘র সমন্বয়ক মোঃ আলী শাহীন, ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মজুমদার, অপরাজেয় বাংলাদেশ‘র মাহবুব উল আলম, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের সোহাইল উদ দোজা ও চন্দন বডুয়া, মমতার তাসফিকা আকতার, ইউসেপ‘র অঞ্জন চক্রবর্তী, কারিতাসের অগাথা তলাপাত্র, উৎসের মোঃ সুমন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওয়মেন‘র মোঃ ওবিদুর রহমান, এপিএবি‘র কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, বিটার কান্তা মল্লিকসহ প্রমূখ।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম/বি