spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদকক্সবাজার‘রোহিঙ্গারা কঠিন সময় অতিবাহিত করছে’

বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পক্ষে থাকার আহ্বান কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের

‘রোহিঙ্গারা কঠিন সময় অতিবাহিত করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

বাংলাদেশ সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও সমস্যা একই। রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব বহন করা এবং তাদের সম্মানের সাথে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার দায়িত্বও মিয়ানমার সরকারের। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের পক্ষে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা কঠিন। তাই রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধি দল।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর সোমবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে সফররত কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের ২ সদস্য গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ কালে এসব কথা বলেন।

সন্ধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এবং এই রোহিঙ্গা সমস্যা হঠাৎ করেই সমাধান সম্ভব নয়। তাই তাদের আশা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিক্ষা দানের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করলে তারা তাদের পরিবার চালাতে পারবে। আর এই কঠিন কাজটি বাস্তবায়ন করতে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং তাদের সাহায্যে প্রত্যেক দেশের চেষ্টা এবং বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশাবাদি খুব দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়া, লেখাপড়ার ব্যবস্থা, বর্তমানের জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গারা স্বদেশ মিয়াানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য দাবি জানায়।

এসব বিষয় প্রতিবেদন আকারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবহিত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার উদাহরণ তৈরি করেছেন। এর জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানায়।

প্রতিনিধি দলের সদস্য রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিক বলেছেন, রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে যে তথ্য পেয়েছি, তা লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হবে। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণের জন্য বিশ্বের সব রাষ্ট্রকে একযোগে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিতে কাজ করার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।

সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেমে আইএসসিজির অফিস হয়ে ক্যাম্পে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস ও রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিকের নেতৃত্বে ১১সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল। বেলা সাডে এগারোটার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছায় এবং প্রায় ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান করেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) মো. আমির জাফর জানান, কংগ্রেস প্রতিনিধি দল প্রথমে উখিয়ার বালুখালীস্থ ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেজিষ্ট্রেশন কেন্দ্রে যান। সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় শেষে রোহিঙ্গাদের ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম তদারকি করেন এবং ডাটা কার্ডের বিভিন্ন সুবিধা নিতে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এপিবিএন সদস্যরা প্রতিনিধিদলের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত পরির্দশনে সার্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) সৈয়দ হারুনুর রশীদ জানান, বালুখালীস্থ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কুতুপালং ১১ নম্বর ক্যাম্পের সি/১ বøকে অবস্থিত ইউএস অর্থায়নে পরিচালিত সান লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে মায়ানমার ক্যারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি তদারকি করেন। এরপর ডাবিøউএফপির ই-ভাউচার আউটলেট এবং রোহিঙ্গারা ডাটা কার্ডের মাধ্যমে কিভাবে রেশন গ্রহণ করে তা পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন স্টোর পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গারা একটি আবেদন দেন প্রতিনিধিদলকে।

পরে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইউএনএইচসিআর-এর উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আইন সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ এবং রোহিঙ্গাদের যে সকল আইনগত সেবা প্রদান করা হয় তা তদারকি করেন। সবশেেেষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এসময় রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার হাত বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আকুতি নিয়ে আহবান জানান। বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করেন তারা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, সোমবার সকাল নয়টায় মার্কিন কংগ্রেসের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরনার্থীরদের সমন্বয় সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রæপের অফিসে জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)সহ ইউএন’র বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে প্রতিনিধি দল উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা ক্যাম্পে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সাথে আলাপ করেন। বিকেলে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসে এসে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠত করেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই এখানে ছিল আরও কয়েক লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা। ফলে সব মিলিয়ে এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১২ লাখের বেশি।

মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বর্তমানে বিশাল এই জনগোষ্ঠী নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার বারবার আশ্বাস দিলেও একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়নি। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার অবস্থা দেখতে বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানীয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রায় ক্যাম্পে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দলও ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন সোমবার।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ