spot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদকক্সবাজারপাহাড়ের কারখানা থেকে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ হতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

পাহাড়ের কারখানা থেকে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ হতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

কক্সবাজার প্রতিনিধি
spot_img

কক্সবাজারের টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল অস্ত্রের কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানা। সেখান থেকে পরিচালনা করা হতো নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) টেকনাফের রঙ্গীখালী পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে ফয়সাল বাহিনীর প্রধান ফয়সাল ও তার পাঁচ সহযোগীকে আটক করেছে র‍্যাব।

এ সময় দুটি একনলা বড় বন্দুক, চারটি এলজি, একটি অর্ধনির্মিত এলজি, ৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের কার্তুজ, একটি ড্রিল মেশিন, একটি আগুন জ্বালানো মেশিন, দুটি লেদ মেশিন, দুটি বাটাল, একটি শান দেওয়ার রেত, দুটি লোহার পাইপ, দুটি প্লাস, একটি কুপি বাতি এবং তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, টেকনাফের রঙ্গীখালীর গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ডাকাত ফয়সাল (৪০), পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার নজির আহমদের ছেলে বদি আলম ওরফে বদাইয়া (৩৫), বাছা মিয়ার ছেলে সৈয়দ হোসেন (৩২), দক্ষিণ আলীখালীর জানে আলমের ছেলে কবির আহাম্মদ (৪৩), পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার মৃত বনি আমিনের দেলোয়ার হোসন (৩৫) ও উলুছামারি কুনারপাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (২৬)।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় উল্লেখ করেন র‌্যাব-১৫ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক।

তিনি জানান, সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর নজরদারি বাড়ানো হয়। অবশেষে র‍্যাবের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এই কারখানায় যে অস্ত্র তৈরি হতো সেগুলো তারা যেমন ব্যবহার করতো, তেমনি টাকার বিনিময়ে সরবরাহ দিত ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছেও।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রটি টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যাসহ নানা অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এছাড়াও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয় অস্ত্র তৈরির কারখানা। আটককৃত ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের কাছে অস্ত্র সরবরাহসহ নিজেদের তৈরিকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।

তারা আরো জানায়, নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্ধি করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন। মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে অপরাধীরা জানায়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ের আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত। ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে সশস্ত্র হামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক জানান, আটক ফয়সাল উদ্দিন অস্ত্রধারী ডাকাত দলের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় তিনটির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত বদি আলম ওরফে বদাইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, কবির আহাম্মদের বিরুদ্ধে ২টি, সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ