সোনালী ব্যাংক পিএলসি, চট্টগ্রাম (উত্তর ও দক্ষিণ)-এর মহাব্যবস্থাপকগণ মো. মুসা খান ও মো. সাইফুল আজিজের সহিত বিজিএমইএ’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর খুলশীর বিজিএমইএ ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ’র পরিচালক শফিউল করিম (খোকন), এম. এহসানুল হক, প্রাক্তন পরিচালক জনাব এস.এম. সাজেদুল ইসলাম সহ পোশাক শিল্পের মালিকগণ, সোনালী ব্যাংক পিএলসি, চট্টগ্রামের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘৮০ দশকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সূচনা লগ্নে চট্টগ্রামে কাস্টমস্ ও বন্দরের সুবিধার কারণে পোশাক শিল্প চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেই বিকশিত হয়েছে এবং জাতীয় রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যাসহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তীতে বিদেশি ক্রেতার পরিদর্শন সংস্থা Accord & Alliance কর্তৃক বিল্ডিং ও ফায়ার সেইফটি, কমপ্লায়েন্সের বাধ্যবাধকতার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রপ্তানি আদেশ স্বল্পতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতা কর্তৃক রপ্তানি আদেশ বাতিল, ডিসকাউন্ট প্রদান পূর্বক এয়ারশিপমেন্ট, রপ্তানি পরবর্তীতে বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে চট্টগ্রামস্থ অনেকগুলো পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণগ্রস্ত হয়ে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। রুগ্ন পোশাক শিল্পের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে বিজিএমইএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সাথে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
জাতীয় রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে রুগ্ন পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের অবদান বিবেচনা পূর্বক সোনালী ব্যাংকের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলাসহ বিভিন্ন মামলা জনিত হয়রানি না করে সহজে ঋণের রি-সিডিউল অথবা দায়-দেনা পরিশোধের বিষয়ে সহনীয় মনোভাব পোষণ করে কার্যক্রম পরিচালনা জন্য তিনি সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র মহাব্যবস্থাপকগণকে অনুরোধ জানান।
বিজিএমইএ’র পরিচালক ও সীক ইন্ডাষ্ট্রি বিষয়ক স্থায়ী কমিটি’র ডাইরেক্টর ইনচার্জ এম. এহসানুল হক রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে যাওয়া পোশাক শিল্পসমূহের দায়-দেনার চিত্র তুলে ধরেন এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সে সকল শিল্প মালিকদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। ঋণে জর্জরিত রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে যাওয়া মালিকদেরকে মামলাজনিত হয়রানি থেকে রেহাই দেয়া সহ তাঁদের দায়-দেনা অবসায়নে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
সোনালী ব্যাংক’র মহাব্যবস্থাপক, চট্টগ্রাম (উত্তর) মো. মুসা খান বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পোশাক শিল্প মালিক তথা বিজিএমইএ’কে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক ইতিপূর্বে চট্টগ্রামে পোশাক শিল্পে সর্বাধিক বিনিয়োগ করেছে। চট্টগ্রামে অধিকাংশ পোশাক শিল্প মালিকগণ রপ্তানি আদেশ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি ক্রেতার সাথে যোগাযোগ না করে বায়িং হাউজের মাধ্যমে রপ্তানি আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিলতায় স্টক লটসহ এয়ারশিপমেন্ট করার কারণে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহ রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহকে ঋণ অবসায়ন, ঋণ পুনঃতপশীলীকরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য তিনি পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সোনালী ব্যাংক’র মহাব্যবস্থাপক, চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) মো. সাইফুল আজিজ বলেন, ‘পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট রুগ্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবসায়ন, ঋণ পুনঃতপশীলীকরণের বিষয়ে সরকার কর্তৃক অনেকটা নমনীয় ভাব পোষণ করে সহজ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রুগ্ন পোশাক শিল্পের মালিকগণ দায়-দেনা মুক্ত হতে পারে, এ’বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কর্তৃক সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র পরিচালক শফিউল করিম (খোকন), পোশাক শিল্প মালিক আবদুল হালিম দোভাষ সহ সোনালী ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংক পিএলসি-এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপকদ্বয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।