spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদবৃহত্তর চট্টগ্রাম‘সঙ্কটাপন্ন’ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ‘সিভিল সার্ভিস একাডেমি’!

‘সঙ্কটাপন্ন’ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ‘সিভিল সার্ভিস একাডেমি’!

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

নতুন নিয়োগপ্রপ্তি করা বিসিএস ক্যাডারদের প্রশিক্ষণে কক্সবাজার সাগরপাড়ের কলাতলী শুকনাছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৭০০ একর জায়গাযুড়ে ‘বঙ্গবন্ধু সিভিল সার্ভিস একাডেমি’ (বিএপিএ) ও বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে, প্রস্তাবিত জমিসহ শুকনাছড়ি বনাঞ্চলকে বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে এতে কোনো প্রকার স্থাপনা গড়ে তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলে জানায় বন মন্ত্রণালয় সূত্র।

সম্প্রতি শুকনাছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদের নেতৃত্বাধীন উর্ধতন কর্মকর্তাদের একটি দল।

শুকনাছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদের নেতৃত্বাধীন উর্ধতন কর্মকর্তাদের দল

জানা যায়, ভারতের ‘লাল বাহাদুর শাস্ত্রি ইন্সটিটিউটে’র আদলে বিশাল এলাকা নিয়ে কক্সবাজারে ‘বঙ্গবন্ধু সিভিল সার্ভিস একাডেমি’ ও বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠা করতে চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এজন্য ইতোমধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ঝিলংজা মৌজার শুকনাছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৭০০ একর ভূমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নতুন রিক্রুট করা বিসিএস ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে গত বছরের শেষের দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর এই প্রথম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শনে আসেন। 

সূত্র মতে, কক্সবাজার শহর থেকে পূর্ব-পশ্চিম প্রায় ৬ কিলোমিটার চওড়া এবং দক্ষিণে রেজু নদী পর্যন্ত প্রায় একটানা ২২ কিলোমিটার এলাকা সুউচ্চ পর্বতময়। শহর থেকে দক্ষিণ দিকে ক্রমশ: আরো উচুঁ হয়ে ওঠেছে পর্বতগুলো। এ পাহাড়ের পশ্চিম দিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, মাঝখানে সমুদ্র সৈকত। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে চলে গেছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক।

শহরের কলাতলী মোড় থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ গেলেই সুউচ্চ গীরি পর্বতময় এলাকা শুকনাছড়ি। মেরিন ড্রাইভের পূর্বপাশে অবস্থিত এখানকার পাহাড়গুলো থেকে সরাসরি সমুদ্র দেখা যায়। দেড়শ থেকে ২শ ফুট উঁচু খাড়া পাহাড় ও অরণ্য অধ্যুষিত এখানকার ৭শ একর জমিতে ভারতের লাল বাহাদুর শাস্ত্রি ইন্সটিটিউটের মতোই একটি সিভিল সার্ভিস একাডেমি স্থাপন করতে চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে এই একাডেমি বনাঞ্চলে না করে শহরতলীর বাঁকখালী নদী অথবা মহেশখালী চ্যানেলের তীরে করাই সবেচেয়ে উপযুক্ত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী মহল।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বনবিভাগের এক পত্রে রোহিঙ্গাসহ নানা কারণে বর্তমানে দক্ষিণ বনবিভাগের যে অবস্থা, তাতে নতুন করে বনভূমি বরাদ্দ দেয়া হলে বন বলতে অবশিষ্ট তেমন কিছুই থাকবে না বলে উল্লেখ করা হয়। 

শুকনাছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদের নেতৃত্বাধীন উর্ধতন কর্মকর্তাদের দল

পরিবেশবাদী সংগঠন নেতৃবৃন্দ বলেন, উক্ত এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ ছাড়া নয়নাভিরাম এই বনাঞ্চল কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের পর্যটনেরও একটা বড় সম্পদ। এটিকে কোনোভাবে নষ্ট করা অবিবেচকের কাজ হবে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনাঞ্চলে ৬ বছরে ১১ হাজার একরেরও অধিক বনভূমি ইতোমধ্যেই ধ্বংস করা হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজারে জীববৈচিত্র্য একেবারে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ওইসব এলাকায় হাতি মানুষে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। হাতি চলাচল ও বিচরণের ভূমি কমে যাওয়ার কারণে গত দেড় বছরে ২৭ রোহিঙ্গা নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া আবাস্থল ধ্বংস হওয়ায় কয়েক শ’ পাখপাখালি ও বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে রয়েছে। 

এবিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য পরিদর্শনকারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, তাঁর একান্ত সচিব শামীম আহমেদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সাথে মোবাইল কল, ক্ষুদেবার্তা ও ই-মেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।  

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ