spot_imgspot_imgspot_img
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত। রেজি নং-৯২
শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদবিনোদনজেসমিন দীপা’র ছোটগল্প ‘অরিন’

জেসমিন দীপা’র ছোটগল্প ‘অরিন’

জেসমিন দীপা
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

আমরা যে বাসায় থাকতাম সে বাসায় অরিন’রা এলো ভাড়া। মা-বাবা আর এক সন্তান অরিন। আমার পরিবারও এমন, এক সন্তান ও আমরা মা-বাবা।

অরিন আমার মেয়ের এক ইয়ার ছোট ছিল, এক ক্লাস নীচে পড়তো। ফুল ফ্যামিলি প্রায় সমবয়সী হওয়াতে এবং উভয় পক্ষের আন্তরিকতার কারণে আমরা খুব অল্প সময়ে কাছাকাছি চলে আসলাম। সম্পর্ক মধুর ও মজবুত হলো।

ওরা আসাতে আমি খুব খুশী হলাম, বিশেষ কারণ ছিল যে, আমার মেয়েটা একজন খেলার সাথী পেলো- এই ভেবে।

ওরা খেলতো, এক সাথে খেতো। প্রায়-ই সময় একই রকম ড্রেস কেনা হতো, ওদের নামেও ছিল মিল।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় একে অপরের বাসায় নাস্তা করে স্টার প্লাস চ্যানেল-এ হিন্দি সিরিয়াল দেখতে বসতাম বেশ আয়োজন করে। ওটাই ছিল দিনের সবচেয়ে বড় বিনোদন।

চাইল্ড সাইকোলজি আমি বুঝি না। আমার পড়াশোনার বিষয় বস্তু ছিলো না। তবে প্রতিটা মা চাইল্ড সাইকোলজিস্ট বলে আমি মনে করি। সন্তান মানুষ বা বড় করে তুলতে যেয়ে এটা হয়েই যায়।

অরিন এক সময় অদ্ভূত কিছু কাজ করতে শুরু করলো। পরিস্থিতি ক্রিয়েট করা, কিছু সমস্যা তৈরি করা- যেন বিপরীত সমস্যা তৈরি হয়, বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়। যেন বিবাদ সৃষ্টি হয়।

আমাদের বাচ্চারা অনেক ছোট, একজন ছয়, একজন পাঁচ। ওদের আর কি-বা বলা যায় আদর করে বোঝানো ছাড়া!

আমি ২/৩টি ঘটনা হুবহু শেয়ার করছি। আমার বাসার সামনের বারান্দা বেশ বড় ছিল। সেখানে দেড়শ’র মতো টব ছিল। ওখানে আড্ডা খেলাধুলা সবই চলতো।

সেদিন প্রায় সন্ধ্যা, দুই মেয়ে খেলছে ওদের মতো করে। আমি বাসার ভেতরে, অরিনের মা নীচে ওদের বাসায়। হঠাৎ কানে এলো অরিনের গলার চেন হারিয়েছে। আমি বারান্দায় গিয়ে খোঁজা শুরু করলাম, লাইট জ্বালিয়ে চিরুনি অভিযান চলছে। না, কোথাও নেই। হঠাৎ অরিন বলে উঠলো- ‘এই যে চেইন’।

আমি বেশ অবাক হলাম ও স্বস্তি পেলাম। অবাক হলাম কারণ যেখানে চেইন পাওয়া গেল সেখানে আমি অনেক বার খুঁজেছি, ছিল না। অরিন নিজ হাতেই কাজটা করেছে।

তখন আমি আমার মেয়েকে নিডো দিতাম, কর্ন ফ্ল্যাক্স দিতাম। এই খাবারগুলোর সাথে বাচ্চাদের আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো বিভিন্ন রকম খেলা বা স্টিকার দিতো। আমার মেয়ে অনেকগুলো জমিয়েছিল। মাঝে মাঝে বের করে খেলতো।

সেদিনও অরিন আর আমার মেয়ে খেলা করছে। আমার মেয়ে কান্না করছে। তার একটা প্লেন বা জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমি মেয়েকে থামিয়ে বললাম- ‘খুঁজে দিচ্ছি বাবা’।

মনে সন্দেহ, অরিন লুকিয়ে রেখেছে, এটাই ওর খেলা এক ধরনের। খুঁজছি আমি, কোথাও নেই। হঠাৎ অরিন দৌড়ে ডাইনিং এর বেসিন কর্নারে গেলো এবং জোরে গলায় বললো- ‘এই যে আন্টি এখানে’। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না।

স্টার প্লাস এ কুমকুম দেখছি সবাই। সবাই খাটে বসে। অরিন বাসা থেকে একটা ক্যান্ডি ডল নিয়ে এসেছে। ওর কোলের উপর ছিল ডলটা। আমি লক্ষ্য করলাম ও আমার সাথে এক ধরনের গেমিং করছে।

আমি যতবার সিরিয়ালে মনোযোগ দিচ্ছি ও সবার নজর এড়িয়ে পুতুলটা আমার কাছে এগিয়ে দিচ্ছে, আমি হাত দিতে গেলেই দ্রুত সেটা সরিয়ে নিচ্ছে এভাবে চললো ৩০ মিনিট।

তাই হোক হেসে আদর করে ম্যানেজ করলাম সময়টা। আফটার অল ছোট মানুষ। পরে হয়ত এক সময় মনে মনে ভাবতাম, এত ছোট বয়সে এতো নেগেটিভিটি, এর পরিণাম কি? এর কিছুদিন পর আমাদের সেখানকার পাঠ শেষ হয়ে যায়। আমরা আলাদা আলাদা জায়গায় চলে যাই।

বর্তমান পরিবার, পরিজন, সমাজ, সংগঠন, রাজনীতি সব জায়গায় একই অবস্থা বিরাজমান। ভয় হয়- এই অসুস্থ পরিবেশে মানুষ কিভাবে স্বস্তিতে বাঁচবে!

লেখক: কবি ও সাহিত্যিক

আরও পড়ুন

spot_img

সর্বশেষ